আজ (০২ ডিসেম্বর, ২০২০) জনাব বিচারপতি আশরাফুল কামাল এবং জনাব বিচারপতি রাজীক আল জালীল-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বিশেষ বেঞ্চ নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ৬টি মৌজায় (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর) অবস্থিত কৃষিজমি, নীচুভূমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষের ১৮৬৮ বিঘা জমিতে জনাব মো: নূর আলীর মালিকানাধীন সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও তথাকথিত সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোন কর্তৃক মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং-১৬৮৩/২০১৪) চুড়ান্ত শুনানী শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন। রায়ে আদালত এ বিষয়ে ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখে জনাব বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও জনাব বিচারপতি মো: খুরশিদ আলম সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রুল চুড়ান্ত ঘোষণা করেন।
নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষে জোরপূর্বক মাটি ভরাট করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রীট পিটিশন (রীট পিটিশন নং-১৬৮৩/২০১৪) দায়ের করে। উক্ত রীট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানীতে হাইকোর্ট বিভাগ গত ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখে রুলনিশি জারি করেন এবং ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: কে প্রকল্প এলাকার মাটি/বালি ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। সেইসাথে ইতোমধ্যে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লি: এর সহযোগী কোম্পানী ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট লি: উল্লেখিত ছয়টি মৌজায় তথাকথিত সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মাটি ভরাটের অনুমতি পেয়েছে দাবি করে এবং সে প্রেক্ষিতে আদালতের ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখের প্রদত্ত আদেশ অকার্যকর ঘোষণার জন্য মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করে। শুনানী অন্তে অবকাশকালীন বেঞ্চ গত ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখের আদেশ সংশোধনক্রমে তথাকথিত সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন।
উক্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে বেলা মাননীয় আপীল বিভাগে সিভিল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন দাখিল করে। গত ০৩ নভেম্বর, ২০১৬ ইং তারিখে আপীল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে মাটি ভরাটের কার্যক্রম ও অপসারণের বিষয়ে হাইকোর্টের ২রা মার্চ, ২০১৪ তারিখের নিষেধাজ্ঞা আদেশ বহাল থাকে।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করে জনাব মো: নূর আলী তথাকথিত সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন-এর নামে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখলে বেলা আদালত অবমাননার মামলা (নং-২৭/২০১৭) এবং আদালত অবমাননার মামলা (নং-৮১/২০১৭) দায়ের করে। অব্যাহত মাটি ভরাটের প্রমাণস্বরূপ বেলা পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। মহামান্য হাইকোর্টের নিদের্শে জেলা প্রশাসক, নারায়নগঞ্জ ২২ ফেব্রæয়ারি, ২০১৭ ইং তারিখে এবং মহামান্য আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলা প্রশাসক, নারায়নগঞ্জ ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ব্যক্তিগতভাবে হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগে উপস্থিত হয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের এফিডেভিট দাখিল করেন। বেলা’র দায়েরকৃত সিভিল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন (সিএমপি নং-৮৩৫/২০১৮) শুনানীঅন্তে মাননীয় প্রধান বিচারপতি-র সমন্বয়ে গঠিত আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ১৪ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে জনাব মোহাম্মদ নূর আলীর “সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি” ও তথাকথিত “সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন”-এর নামে নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত একইসাথে ভরাটকৃত মাটি/বালি অপসারন বিষয়ে ২ মার্চ, ২০১৪ তারিখে প্রদত্ত মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন করত উক্ত বিষয়ে ৮ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখের মধ্যে আপীল বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিতে নারায়নগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি জনাব মোহাম্মদ ঈমান আলী, বিচারপতি জনাব হাসান ফয়েজ সিদ্দকী, বিচারপতি জনাব মির্জা হোসাইন হায়দার, বিচারপতি জনাব জিনাত আরা, বিচারপতি জনাব আবু বকর সিদ্দীক ও বিচারপতি জনাব মোঃ নূরুজ্জামান-এর সমন্বয়ে আপীল আদালত এক আদেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত মূল মামলাটি দ্রæত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মূল মামলাটি হাইকোর্টের এই বেঞ্চে প্রেরণ করেন।
দীর্ঘ শুনানীঅন্তে হাইকোর্ট আজ রুলটি চূড়ান্ত ঘোষণা করেন এবং ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে ৬ মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। রায় বাস্তবায়নের স্বার্থে মামলাটি চলমান মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আজ প্রদত্ত রায়ে মহামান্য হাইকোর্ট মো: নূর আলীর মালিকানাধীন ইউনিক প্রোপার্টিজ লি: সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি নাম বদলে সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের নামে উল্লেখিত ৬টি মৌজায় মাটি ভরাটের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা ০২-০৩-২০১৪ তারিখে প্রদত্ত মাটি ভরাট না করার অন্ত:বর্তী আদেশকে পাশ কাটানোর প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত কৃষি জমি, জলাভূমি ও নদীর জমি ভরাট করে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি এবং পরবর্তীতে সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনের নামে মাটি ভরাটের মহোৎসবকে আদালতের রায়কে পাশ কাটানোর সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা বলে রায় দিয়েছেন।
রায়ে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক তদন্তপূর্বক জনাব মো: নূর আলীর মালিকানাধীন ২টি প্রতিষ্ঠানসহ অন্য যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উল্লেখিত মৌজাগুলোর কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নীচু ভূমিতে ভরাটকৃত মাটি উঠিয়ে নিয়ে তা ৬ মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩-১০-২০১৮ তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লেখিত ৬টি মৌজায় ২০০০ সালে যেখানে ২৫০ হেক্টর কৃষি জমিতে ১১টি সেচ প্রকল্প চালু ছিল, ২০১৮ সালে রবি মৌসুমে সেখানে মাত্র ৪৩ হেক্টর কৃষি জমিতে ২টি সেচ স্কীম সচল ছিল। ৯টি ইরি-বোরো স্কীম বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জনাব মো: নূর আলীর প্রকল্পে মাটি ভরাটকে দায়ী করেছেন। জলাশয় রক্ষা পাবলিক ট্রাস্ট বিবেচনায় এখন থেকে ইকোনমিক জোন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পূর্বে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে।
আদালতের আজকের এই রায়ের ফলে জনাব মো: নূর আলীর সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের নামে গৃহীত সকল কার্যক্রম অবৈধ বিবেচিত হবে।
বেলা’র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী জনাব ফিদা এম কামাল, এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাবেক অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল মুরাদ রেজা, এ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
সাঈদ আহমেদ কবীর
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৭১১২০৮০৮১
তারিখ: ২ ডিসেম্বর, ২০২০
Some truly nice and useful information on this site, besides I believe the layout holds great features. Sophie Lucien Casie
Good day! I just want to give you a huge thumbs up for the excellent info you have here on this post. I am returning to your blog for more soon. Debbi Millard Kluge Melody Michail Stefa