আজ (১৫ জানুয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত মালাম বিল ও বিলের জলাবনকে গাছকাটা, স্থাপনা নির্মাণ ও শ্রেণি পরিবর্তন থেকে রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা ও আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে বিলটিকে পূণরায় ইজারা প্রদান সংবিধান ও প্রযোজ্য আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা বেআইনী, আইনি কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন।
রুলে হাকালুকি হাওরের সীমানা নির্ধারণ, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, আহরণমূলক ও ক্ষতিকারক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা ৫ এর বিধান অনুযায়ী হাওরটিকে রক্ষা ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কর্তৃক বিগত ২৫ অক্টোবর, ২০২০ সালে মনাদী মৎসজীবী সমিতি বরাবর প্রদানকৃত ইজারা বাতিল চেয়ে বেলা কর্তৃক প্রেরিত চিঠি নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করেন আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ এ দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১৫০৪১/২০২৩) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না, এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট শামীমা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।
উল্লেখ, দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ি, ও কুলাউড়া উপজেলা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম প্রধান মিঠা পানির বন। বিগত ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৯ তারিখে এ হাওরের ১৮,৩৮৩ (আঠারো হাজার তিনশত তিরাশি) হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ঊপড়ষড়মরপধষ ঈৎরঃরপধষ অৎবধ – ঊঈঅ) ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত এ হাওরে ছোট বড় অনেক বিল রয়েছে যার মধ্যে মালাম বিল অন্যতম। মালাম বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের দ্বিতীয়ারদেহী-৮৩ মৌজার এস এ ৫৪ ও ১০৮ দাগে অবস্থিত যার আয়তন ৪২৮.৯২ একর । বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে ৫ বছর মেয়াদে (১৪২৭-১৪৩২ বঙ্গাব্দ) জেলা প্রশাসক মানাদী মৎসজীবী সমবায় সমিতি বরাবর মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে এ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ (হিজল, করচসহ অন্যান্য জলজ প্রজাতি) কেটে মানাদী মৎসজীবী সমবায় সমিতি ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষ উপযোগী করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাঁধ নির্মাণের ষ্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারা গ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি বাতিল করা হয়নি। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওর ও মালাম বিল রক্ষায় বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক; মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক; মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার; পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক; সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা; মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ); মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; পরিবেশ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক; বড়লেখা পুলিশ স্টেশনের অফিসার-ইন-চার্জ; বড়লেখা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল- ০১৮৩৩০২৬২৬২