আজ (০২ জানুয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ আইন অনুযায়ী তদন্তপূর্বক ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত “বংশী” নদীতে বিদ্যমান দখলদারদের এবং এ নদী দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে নদীটির দখলদার ও দূষণকারীদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ প্রদান করেছেন। একইসাথে আদালত সাভার পৌরসভার পৌর বর্জ্য এবং ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (উঊচত) এর শিল্প বর্জ্য বংশী নদীতে অনতিবিলম্বে ফেলা বন্ধ করতে সাভারের পৌর মেয়র ও ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (উঊচত) এর নির্বাহী পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত। অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত দখল ও দূষণ থেকে বংশী নদী রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রযোজ্য আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা আইন বহির্ভূত, বেআইনী ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। রুলে আদালত আরও জানতে চেয়েছেন যে, বংশী নদীকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থাপনার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না। সিএস/আর এস জরিপ এবং মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীটির সীমানা নির্ধারণ, নদী সীমানায় বিদ্যমান সকল দখলদারদের উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদীকে রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১৫৫৪১/২০২৩) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট শামীমা নাসরিন ও বেলা’র আইনজীবি এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান;, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; পরিবেশ অধিদপ্তর (ঢাকা জেলা কার্যালয়)-এর উপ পরিচালক; সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঢাকা রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক।
উল্লেখ্য, বংশী নদী ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার সাভার পৌরসভায় ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে একই উপজেলার আমিন বাজারের নিকট তুরাগ নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এ নদীর দু’পাশের তীর দখল করে গড়ে উঠেছে শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। শুধু দখল নয়, শত শত কলকারখানার বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিভার এ- ডেল্টা রিসার্চ এর জরিপ অনুযায়ী দেশের ৫৬টি দূষিত নদীর মধ্যে এটি একটি। শিল্প বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও পৌরবর্জ্যরে দূষণে এ নদীর পানির উঙ, ইঙউ, ঈঙউ এর মাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য এবং জলজ প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণ এ মানমাত্রা অনপুযুক্ত। এ নদীর পানি ব্যবহারকারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এবং আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগসহ নানা অসুখে।
মূলত দখল ও দূষণ ভয়াবহতা থেকে বংশী নদীকে রক্ষার স্বার্থে বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে যার ফলশ্রুতিতে মহামান্য আদালত উল্লেখিত আদেশ ও রুল জারি করেন।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২