-প্রেস বিজ্ঞপ্তি-
নেত্রকোনা জেলাস্থ মহাদেও নদী রক্ষায় আদালতের নির্দেশ
আজ ১৩ জুন, ২০২২ মহামান্য হাইকোর্ট নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদী, নদী সংলগ্ন ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসত বাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা আইনবহির্ভুত, আইনী কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। একইসাথে মহাদেও নদী, নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সম্পদের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৭ অনুযায়ী নিরুপণের ও ইজারা গ্রহীতাসহ দোষী ব্যক্তির নিকট হতে আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, নেত্রকোনাকে মহাদেও নদীর অবস্থা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রস্তুত ও আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন ।
জনাব বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জনাব বিচারপতি খিজির হায়াত-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ৪৫৬৩/২০২২) প্রাথমিক শুনানী অন্তে উল্লেখিত রুল ও আদেশ জারি করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং রাষ্টপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব বিপুল বাগমার।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৩। চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; ৪। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৫। মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; ৬। বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ; ৭। জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনা; ৮। পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা; ৯। সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, নেত্রকোনা; ১০। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলমাকান্দা উপজেলা, নেত্রকোনা।
উল্লেখ্য, মহাদেও নদী ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলাস্থ ৮ নং রংছাতি ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর ৮ নং রংছাতি ইউনিয়নের অন্তর্গত ওমরাগাঁও, হাসানোয়াগাঁও ও বিশাউতি মৌজায় একটি ঘোষিত বালুমহাল রয়েছে যা ইজারা প্রদান করা হয়েছে। বালুমহালে বালু না থাকায় মহাদেও নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে ইজারাগ্রহীতা। অনিয়ন্ত্রিত, আইন বহির্ভুত ও নির্বিচারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, মৌতলা, বরুয়াকোনা, ডাকাইয়াপাড়া, কান্দাপাড়া, রাজবাড়ী, সতেরহাতি, ব্যস্তপুর, ছোটমনগড়া ও চিকনটুপ গ্রামবাসীর ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসত বাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাদেও নদী ও এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা। উল্লেখিত এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর বারবার বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নেওয়ায় ক্রমশ বিলীন হচ্ছিল তাদের সম্পদ। সেইসাথে হারিয়ে যাচ্ছিল মহাদেও নদীর অস্তিত্ব। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে স্থানীয় এলাকাবাসী বেলার নিকট আইনী সহযোগীতা চেয়ে আবেদন করলে জনস্বার্থে বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
এস. হাসানুল বান্না
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ১৩ জুন, ২০২২