দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডে কলাবাগানের একটি মাঠ তেঁতুলতলা। প্রায় ৫০ বছর ধরে উন্মুক্ত এই মাঠটি স্থানীয় লক্ষাধিক বাসিন্দা ঈদগাহ হিসেবে, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে, মৃতদেহ গোসল করানোর কাজে এবং খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ১৭ নং ওয়ার্ডের শিশুদের জন্য তেঁতুলতলা একমাত্র খেলার মাঠ ।
মাসাধিককাল যাবৎ উল্লেখিত মাঠে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করেছে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ। কলাবাগান থানা কর্তৃক স্থাপিত সাইনবোর্ড অনুযায়ী, মাঠটিতে কলাবাগান থানা ভবণ নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় উপস্থিত পুলিশদের ভাষ্যমতে, মাঠটি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক থানা নির্মাণ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানটি জনস্বার্থে উন্মুক্ত রাখার দাবিতে ১৭ নং ওয়ার্ডের অধিবাসীগণ ও মাঠ ব্যবহারকারী শিশুরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় মেয়র বরাবর আবেদন করেছেন। তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় ০৬ ফেব্রæয়ারি, ২০২২, ১৬ মার্চ, ২০২২ এবং ০৬ এপ্রিল, ২০২২ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ সরকারের বরাবরে আবেদন প্রেরণ করেছেন।
মাঠটিকে রক্ষায় শিশুসহ এলাকাবসাী ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আয়োজন করে চলেছে। এ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কারণে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ শিশুদের “শাস্তি” প্রদান করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। শিশুদের কান ধরে উঠবস করানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িলে পড়লে কলাবাগান থানার ৩ জন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী, নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের আপত্তি ও দাবি উপেক্ষা করে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ মাঠটিতে ইট, বালু, সিমেন্ট ও সুরকি এনে স্তুপ করে রেখে সাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রেখেছে। এর প্রতিবাদে গত ২৪ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে মাঠ রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সময় আন্দোলনকারীগণের সংগঠক সৈয়দা রতনা ও তাঁর ১৭ বছর বয়সী পুত্র ঈশা আব্দুল্লাহকে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ আটক করে নিয়ে যায়। দিনভর প্রতিবাদের মুখে মাঝ রাতে তাদেরকে থানা কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিলেও সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে সৈয়দা রতনার কাছ থেকে মাঠ রক্ষার আন্দোলন তিনি আর করবেন না বলে মুচলেকায় স্বাক্ষর নিয়েছে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সৈয়দা রতনা ও তাঁর নাবালক পুত্রকে কোন রকম আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, কোন আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়া দীর্ঘ ১৩ ঘন্টারও বেশি সময় আটক রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের ন্যাক্কারজনক লংঘন ও বেআইনী। সৈয়দা রতনা ও তাঁর নাবালক পুত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে গতকাল সারাদিন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কেন যোগাযোগ করা যায়নি তা স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যার দাবী রাখে। বারংবার অনুরোধ সত্তে¡ও থানা ও মাঠে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সৈয়দা রতনা ও তাঁর নাবালক পুত্রের আটকের বিষয়ে ও মাঠে থানা নির্মাণের আইনগত বৈধতার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। ফলে আটক ও তুলে নিয়ে যাওয়া এবং মাঠ দখলের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলাবাগান থানা যে “জোর যার মুল্লুক তার” নীতিরই নিন্দনীয় প্রতিফলন ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট।
নাগরিকদের ন্যূনতম বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চ্চার অধিকার ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষের এমন অবৈধ আটক ও মুচলেকা গ্রহণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
আমাদের স্পষ্ট দাবী হচ্ছে তেঁতুলতলা মাঠটি উন্মুক্ত স্থান ও মাঠ হিসেবে রাখতে হবে এবং মাঠে থানা স্থাপনের চলমান সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মাঠে থানা বা অন্য কোন স্থাপনা হবে না; মাঠে শিশুরা খেলবে, কলাবাগান থানা ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন ও রাজককে অনতিবিলম্বে সেই প্রতিশ্রæতি প্রদান করতে হবে একইসাথে সৈয়দা রতনা ও তাঁর নাবালক পুত্রসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ও এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতি প্রদানকারীগণ-
(১) ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী,ট্রাস্টি,গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র; (২) সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও সভাপতি বাপা; (৩) ড. হোসেন জিল্লুর রহমান,অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী সভাপতি পিপিআরসি; (৪) ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গর্ভনর, বাংলাদেশ ব্যাংক; (৫) ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী; (৬) খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; (৭) শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; (৮) মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক; (৯) ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; (১০) রাশেদা কে. চৌধুরী,নির্বাহী পরিচালক,গণস্বাক্ষরতা অভিযান; (১১) শামসুল হুদা,নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; (১২) শিরিন হক,সদস্য, নারীপক্ষ; (১৩) অধ্যাপক পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়; (১৪) ড. ইমরান রহমান, প্রাক্তন উপাচার্য, ইউল্যাব; (১৬) শাহদীন মালিক, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ; (১৭) সারা হোসেন, অনারারী ডিরেক্টর, বøাস্ট; (১৮) প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; (১৯) গীতিয়ারা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; (২০) এম এম আকাশ, অধ্যাপক,অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; (২১) মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; (২২) ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; (২৩) ফেরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; (২৪) ড. সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; (২৫) ড. স্বপন আদনান, প্রফেসারিয়াল গবেষণা সহযোগী, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়; (২৬) জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; (২৭) রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী, কোস্ট; (২৮) মোঃ নূর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী; (২৯) তাসাফি হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা, বহ্নিশিখা; (৩০) ড. নায়লা জেড খান, পরিচালক, ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন; (৩১) ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী; (৩২) রেহনুমা আহমেদ, লেখক; (৩৩) অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী, লেখক; (৩৪) নবনীতা চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী, গায়ক; (৩৫) মাহমুদ রহমান, আলোক চিত্রী, ম্যাপ-ফটো; (৩৬) ড. সায়দিয়া গুলরুখ,সাংবাদিক; (৩৭) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান নির্বাহী, বেলা।