আজ (২৮ জানুয়ারি, ২০২৪) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর মৌজাস্থিত গৈদারটেক এলাকায় (সিটি প্লট নং ২৮০১, ২৮০৩, ২৮০৪, ৩০০১, ৩৬০১, ৪০০১, ৪০০২, ৪০০৩, ৪০১০৭) অবস্থিত জলাশয় রক্ষা ও সংরক্ষণে এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার এন্ড সীড হেলথ ল্যাবরেটরি নির্মাণের জন্য জলাশয় ভরাটরোধে বিবাদীগণের ব্যার্থতাকে বেআইনী, অননুমোদিত, আইনত কর্তৃত্ববিহীন এবং জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে উল্লেখিত জলাশয়ের ভরাটকৃত অংশ ৩ (তিন) মাসের মধ্যে পুনরুদ্ধারপূর্বক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং জলাশয় হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার এন্ড সীড হেলথ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ৯৬২৪/২০২৩) মামলার চূড়ান্ত শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি নাইমা হায়দার এবং জনাব বিচারপতি কাজী জিনাত হক এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর মৌজাস্থিত গৈদারটেক এলাকায় ১১৭ একর জলাশয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ডধঃবৎ জবমঁষধঃরহম চড়হফ হিসেবে চিহ্নিত। এ ডধঃবৎ জবমঁষধঃরহম চড়হফ ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) এ জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত। আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে “সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার এন্ড সীড হেলথ ল্যাবরেটরি” নির্মাণের জন্য ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) এ চিহ্নিত এ জলাশয়ের প্রায় ১২ একর জমি ভরাট করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন। সরকারী সংস্থা কর্তৃক জনগুরুত্বপূর্ণ এ জলাশয় ভরাটের সংবাদ দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উল্লেখিত জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে পত্র প্রেরণ করে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত পত্রের তোয়াক্কা না করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনরূপ অনুমোদন ছাড়াই এ জলাশয় ভরাট করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ ও সরকার কর্তৃক গেজেটকৃত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং জলাশয়ে বালু ভরাট ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। ঞড়হি ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ অপঃ,১৯৫৩ অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় যে কোন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হলে রাজউকের অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশে প্রচলিত আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে বেলা বিগত ০১ আগষ্ট, ২০২৩ এ একটি জনস্বার্থমূলক মামলা দায়ের করলে মহামান্য আদালত বিগত ১৩ আগষ্ট, ২০২৩ তারিখে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারীর পাশাপাশি ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ১। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ২। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৩। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৪। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ৫। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, ৬। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, ৭। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ৮। ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ৯। ঢাকার পুলিশ সুপার, ১০। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, ১১। পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগরের পরিচালক এবং ১২। সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার এন্ড সীড হেলথ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালক।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। বিএডিসি এর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস এম জহুরুল ইসলাম, রাজউকের পক্ষে মামলাটি শুনানি করেন এডভোকেট ইমাম হাসান এবং ডিএনসিসির আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট রেজা-ই-রাব্বি খন্দকার ও এডভোকেট সৈয়দা সিলমা তামারিনা।
জলাশয়টি রক্ষায় বিগত ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান (২০২২-২০৩৫) বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাঃ বিএডিসিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক জলাশয় ভরাট শিরোনামে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এছাড়াও বিগত ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ জলাশয় ভরাট করে বিএডিসির টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণ কাজ বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল, ব্লাষ্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এবং পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২
২৮ জানুয়ারি, ২০২৪।