আজ (১৪ জুলাই, ২০২১) চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালী থানাধীন সিআরবি এলাকা উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গণ্য করে কোন ধরনের গাছ না কাটার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এবং পাশাপাশি কোন পাহাড় ও টিলা এবং গাছ-পালা কেটে হাসপাতাল নির্মাণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরম এন্ড ডিভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ মোট ৫টি সংগঠন। পাশাপাশি পরিবেশের গুরুত্ব অনুধাবন করে শতবর্ষী গাছ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এলাকাটিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী “বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা”, জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ এবং কুঞ্জ বন ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান ঘোষণার এবং শতবর্ষী গাছগুলোকে স্মারক বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানায়।
সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বেসরকারি সংস্থা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ৬ একর জায়গার উপর ৫০০ শয্যা ও ১০০ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা তে সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম নগরীর সকল পাহাড়/টিলাকে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত রক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করেছে। চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত অপরূপ নৈসর্গিক অঞ্চল, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকলা এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ সিআরবি এলাকায় বাংলদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চত করার জন্য একটি হাতপাতাল থাকা সত্তে¡ও,আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল নির্মিত হলে পাহাড়-টিলা এবং অসংখ্য গাছ কাটা পড়বে, জীববৈচিত্র্য তার আবাস হারাবে, জনসাধারণের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে, লোক সমাগম হবে, যাতে করে সিআরবি অঞ্চল তার শতবছরের বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং নির্জন এলাকাটি কোলাহলযুক্ত একটি ব্যস্ত অঞ্চলে পরিণত হবে। তাতে করে এ অঞ্চলের গাছ ও জীববৈচিত্র্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য এলাকাটি ছোট বড় পাহাড় ,টিলার সম্বনয়ে মোট ২১০ একর জুড়ে বিস্তৃত একটি স্থান। যেখানে রয়েছে সেন্ট্রাল বৃটিশ আমলের রেলওয়ে বিল্ডিং,অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন বাংলো, শিরিষ, গর্জন, কড়ইসহ নানা শতবর্ষী গাছ। এসকল গাছে বসবাস করে পাহাড়ী ময়না, টিয়া, শালিক, জালালী কবুতর, চড়–ই, ফিংগে, ছাতারে, মাছরাঙা, কাঠঠুকরাসহ নানা প্রজাতির পাকপাখালী। ছোট বড় পাহাড়-টিলা, গাছ-গাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা আর অনেক শতবর্ষী বৃক্ষ দেখতে ছিমছাম ছবির মত এই পাহাড় কেবলমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩০ সালের ইতিহাস প্্রসিদ্ধ চ্ট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বিদ্রোহীরা অর্থ সংগ্রহের জন্য এখানে অভিযান চালিয়েছিল,তাই ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সিআরবি, সাতরাস্ত্ার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মÐিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের “ফুসফুস” হিসেবে গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদী বেষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগরী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে একদন্ড শান্তি খোঁজার জন্য নাগরিকেরা সিআরবি এলাকায় সমবেত হন, মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নির্মল বায়ু, নির্জনতা উপভোগ ইত্যাদি কারণে। তাছাড়া এখানে রয়েছে শিরিষতলা নামে একটি প্রশস্ত মাঠ যেখানে প্রতি বছর ১লা বৈশাখ, ১লা ফাল্পুন ইত্যাদি ঐতিহ্যগত উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে।
নোটিশটি প্রেরণ করা হয়েছে সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়; সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ে; মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; প্রধান বন সংরক্ষক; জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল); বিভাগীয় বন কর্মকর্তা; বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট; জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম; পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম; পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম অঞ্চল); ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোতয়ালী থানা, চট্টগ্রাম; ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড বরাবর।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
সাঈদ আহমেদ কবীর
এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১২০৮০৮১
তারিখ: ১৪ জুলাই, ২০২১