-প্রেস বিজ্ঞপ্তি-
খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষি জমি হুকুম দখল থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়ে সরকারের ১০ টি সংস্থাকে পত্র প্রেরণ
আজ (৭ জুলাই, ২০২২) খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন বানিশান্তা ইউনিয়নের কৃষকদের জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস ৩০০ একর কৃষি জমি হুকুম দখল না করে বিকল্প করণীয় বিষয়ে আলোচনার জন্য সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে সরকারের ১০ টি সংস্থা বরাবর পত্র প্রেরণ করেছে ৮ টি পরিবেশবাদী সংগঠন। পত্রটির অনুলিপি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রণালয়; মাননীয় মন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; এবং মাননীয় মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০২০ সালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত “মোংলা বন্দর ইনার বারে ড্রেজিং” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীন পশুর নদী ড্রেজিং করা মাটি ও বালু ফেলার জন্য ১৫০০ একর জমি হুকুমদখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যার মধ্যে খুলনা জেলার মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৭০০ একর জমি সরকারীভাবে হুকুম দখলের মাধ্যমে বালু ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বালু ফেলা সম্পন্ন হয়েছে এবং দাকোপ উপজেলাধীন বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষি জমিতে বালু ফেলার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধীন উল্লেখিত কৃষি জমিতে পশুর নদীর ড্রেজিং করা মাটি ও বালু ফেলার জন্য ২০২১ সালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ দাকোপ উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) কে অনাপত্তি প্রদানের জন্য চিঠি দিলে দাকোপের সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান আপত্তি জানানোর কারণে দাকোপের প্রস্তাবিত কৃষিজমিতে ড্রেজিং এর মাটি ও বালু ফেলার বিষয়টি সেই সময় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এলাকার কৃষকরাও তাদের কৃষিজমি রক্ষায় শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল। সম্প্রতি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা ৩০০ একর জমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং গত ফেব্রæয়ারি, ২০২২ এ খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে ২৫০ জন কৃষি জমির মালিককে হুকুম দখলের নোটিশ প্রদান করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমরা অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে কৃষিজমির মালিকগণ আপত্তি জানিয়ে এবং তাদের জমিতে মাটি ও বালু না ফেলার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সকল মতামত উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসন মোংলা বন্দরের অনুক‚লে বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষি জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কৃষিজমি রক্ষায় কতিপয় স্থানীয় বাসিন্দা আইনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
প্রকল্পের ইআইএ ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিলো এ বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্যের উপর যে, বানিশান্তা মৌজার ৩০০ একর জমি চিংড়ি ঘের এলাকা। যদিও বানিশান্তা সম্পূর্ণ কৃষি প্রধান এলাকা। এ মৌজায় ধান, তরমুজসহ সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় কৃষকেরা। বানিশান্তা মৌজায় প্রায় ৪,৫০০ কৃষক পরিবার বসবাস করে যাদের মধ্যে ভূমি হুকুম দখলের কারণে প্রায় ১,৬০০ পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবার।
আশংকার বিষয় যে, পশুর নদী ড্রেজিং এর মাটি ও বালু কৃষিজমিতে ফেললে ভবিষ্যতে সে স্থানটি কোনো ফসল ফলানোর উপযোগী থাকবেনা। ফলে এলাকাবাসী হুকুম দখলের দশ বছর এবং পরবর্তীতে এ জমিতে আর কোন ফসল ফলাতে পারবেনা যা তাদের সংবিধান স্বীকৃত জীবনের অধিকার, পেশার অধিকার ও সম্পত্তির অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। তিন ফসলি উর্বর, বিস্তীর্ণ কৃষি জমি হুকুম দখলের আওতায় এনে মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করলে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত সংক্রান্ত যাবতীয় উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রæতির স্পষ্ট ব্যতয় ঘটবে। হুকুম দখলের এমন উদ্যোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে কৃষি জমি সুরক্ষায় প্রদত্ত ঘোষণার পরিপন্থি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃষি ও কৃষকের প্রতি দৃঢ় অবস্থান এবং “এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না” এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে যথাযথ ও বস্তুনিষ্ঠ পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ এবং সামাজিক প্রভাব নিরুপন ছাড়াই কৃষি জমি ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে।
পত্রটিতে স্বাক্ষর করেছেন –
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও সভাপতি, বাপা; ২. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; ৩. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; ৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ; ৫. গোলাম মনোয়ার কামাল, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র; ৬. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ৭. সারা হোসেন, আইনজীবী ও অনারারী ডিরেক্টর, বøাস্ট ও ৮. আসিফ সালেহ, নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক।
পত্রগ্রহীতাগণ ঃ ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৩। সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়; ৪। চেয়ারম্যান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ; ৫। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৬। জেলা প্রশাসক, খুলনা; ৭। পুলিশ সুপার, খুলনা; ৮। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দাকোপ, খুলনা; ৯। পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়; ও ১০। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, খুলনা।
বার্তা প্রেরক –
এস. হাসানুল বান্না
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৮৩৩০২৬২৬২
৭ জুলাই, ২০২২