কমিউনিটি কনসালটেশন মিটিং
প্রেক্ষিত বাদুরা খাল
তারিখ: ৪ ডিসেম্বর ২০১৯
স্থান : মিরুখালী, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।
প্রতিবেদন তৈরী: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী খাল হচ্ছে বাদুরা খাল। প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটির পানি দিয়ে এ ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের মানুষের চাষাবাদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পানীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ২০১০ সালে খালটিতে ভাঙ্গন থেকে মাদ্রাসা রক্ষার অজুহাতে বাঁধ দেয়ার কারনে এবং পরবতীর্ েত সড়ক ও জনপথ বিভাগ খালটির উৎসমুখ দিয়ে পাকাসড়ক নির্মাণ করার কারনে এ ইউনিয়নের কৃষকরা একদিকে শুকনো মৌসুমে পানির সংকটে পড়েছে আবার বর্ষামৌসুমে এলাকার সমস্ত মানুষ পানি বন্দী হয়ে থাকতো। ইউনিয়নের প্রায় ১৫,০০০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ‘বেলা’ দায়ী ব্যক্তিদের ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিবাদী করে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। রিট নং ১১৩০২/২০১৫। মামলা পরবর্তী সময়ে কমিউনিটির বিভিনড়ব শ্রেণীপেশার মোট ৩০ জন পুরুষ অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে খালের বর্তমান অব¯া’ এবং তাদের মতামত জানতে ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মিরুখালী ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে মঠবাড়িয়া, পিরোজপুরে এক সভার আয়োজন করা হয়েছে। উত্তর মিরুখালীর শৌলা গ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব মোঃ গিয়াসউদ্দিন মহারাজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভার শুরুতেই পরিচয় পবর্ শেষে সভার উদ্দেশ্য ও ইস্যু ভিত্তিক আলোচনা করা হয়। বেলা, বরিশালের সমন্বয়কারী জনাব লিংকন বায়েন ইস্যু ভিত্তিক সভায় বাদুরা খালের অবৈধ বাঁধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেলা কর্তৃক উচ্চ আদালতে মামলা এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা সকলেই জনস্বার্থে বাদুরা খাল সংরক্ষণে বেলা’র সময়োপোযোগী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ধণ্যবাদ জানিয়ে বলেন- ‘‘একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের মিথ্যে অজুহাতে ৮টি গ্রামের হাজার-হাজার গ্রামবাসীর ৮-৯ বছর যাবত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের কৃষিকাজ এতটাই ক্ষতির মুখে পড়েছে যে এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে কর্মসংস্থানের খোঁজে চলে যাচ্ছে। সব ঘরে ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে বাড়ী-ঘর পানিতে ডুবে থাকে। রাস্তা-ঘাট চলাচলের অনুপযোগী
হয়ে পড়ে। গবাদি পশু নানা রোগে আμান্ত হয়। এমনকি বছরের বেশিরভাগ সময় বিল এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারনে মাটি এতটাই নরম হয়ে যায় যে কারনে আমন মৌসুমেও জমিতে ট্রা কটর দিয়ে চাষ করা যায় না। ট্রাকটরে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে জমি চাষ করতে হয়। তবে তারা এও বলেন, বেলা’র মামলা হয়েছে এবং হয়তো একদিন দায়ী ব্যক্তিরা সাজাও পাবেন কিš ‘ বাঁধ তো পুর্বের জায়গায় বহাল রয়েছে। আমাদের সমস্যার তো
কোন বাস্তবে পরিবতর্ন হচ্ছে না। বরং বাঁধের পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ পাকা সড়ক নির্মাণ করেছে। তাই আমাদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে। সংকট স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। উন্মুক্ত আলোচনায় তাই সকল বক্তাই সড়ক ও জনপথ বিভাগকেও মামলার বিবাদী করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সাথে তারা এই পরামর্শ দিয়েছেন যে, অচিরেই খালটির সীমানা নির্ধারন করে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ ও খালটির উৎসমুখে পরিকল্পিত ¯øুইসগেট নির্মান করা হলে সমস্যার স্থায়ী
সমাধান হতে পারে। সেই সাথে খালটি পরিকল্পিত ভাবে খনন করে খালের অবাধ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করারও আহŸান জানিয়েছেন’’। অংশগ্রহনকারীদের প্রত্যাশা:
১। খালটির সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারন।
২। বাদুরা খালের উৎসমুখের বাধ অপসারন করে ¯øুইসগেট নির্মান
২। পরিকল্পিতভাবে খালটি খনন করা
৪। নতুন করে বেগম ফজিলাতুনেড়বছা মাদ্রাসার সামনের বাধটিও অপসারন করা
৫। জলাবদ্ধতা দূরীকরনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা
৬। খালের উৎসমুখের পাকা সড়ক নির্মান করায় সড়ক ও জনপথকে মামলায় বিবাদী করা
৭। বেলার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ভূক্তভোগীদের জানানো এবং মামলা অচিরেই সমাধানের ব্যবস্থা করে সমস্যা নিরসন করা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, ‘‘এ এলাকার সকল মানুষই তাদের জীবিকার জন্য কৃষিজমির উপর নির্ভরশীল। অথচ চারদিকে যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা যাবে শুধুই কচুরিপানা ও আগাছায় পরিপূর্ন বিবর্ন মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। এ অবস্থা চলছে ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে অথচ দেখার যেন কেউ নেই। আমাদের সকলের
আগের মতোই জমি আছে কিন্তু ঘরে খাবার নেই। এখানে জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমনকি ওয়ার্ডমেম্বাররা সবাই আছেন কিন্তু আমাদের দুর্ভোগ লাঘবের কারো কোনো ভূমিকা নেই। সবাই দেখেন, শোনেন কিš ‘ তা ঐ পর্যন্তই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারাও পরিদর্শনে এসে সবকিছু দেখে যান কিš ‘ কারো কাছে যেন কোনো সমাধান নেই। তাই গ্রামবাসী নিরূপায় হয়ে এ অবস্থা নিরসনে বেলা’র কাছে আইনগত সহযোগীতার দাবী জানিয়েছিল। বেলা জনস্বার্থে মামলা করায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে সড়ক ও জনপথ বেলা’র মামলাকালীন সময়ে খাল ভরাট করে যে পাকা সড়ক নির্মাণ করেছে তা কেটে যাতে সেখানে পরিকল্পিত ¯ুইসগেট নির্মাণ করতে বাধ্য হয় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তার আশু ব্যবস্থা গ্রহনে বেলা’র ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহনের আহŸান জানাই’’। পরিশেষে তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।