-প্রেস বিজ্ঞপ্তি-
আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘণ করে প্রজ্ঞাপিত বনভূমিতে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কর্তৃক জেলা প্রশাসক কর্তৃক বাতিলকৃত চুক্তি পূণর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে বেলা একটি আদালত অবমাননার মামলা (আদ ালত অবমাননা মামলা নং ২০২/২০২৪) দায়ের করে। আদালত অবমাননার মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আজ ০২ জুন, ২০২৪ এ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) জনাব ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উপর আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। সেইসাথে আদালতের সামনে আগামী ০৯ জুলাই, ২০২৪ তারিখে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
জনাব বিচারপতি জে. বি. এম হাসান ও জনাব বিচারপতি রাজিক-আল-জালিল -এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি আদালত অবমাননার মামলার (আদালত অবমাননা মামলা নং ২০২/২০২৪) প্রাথমিক শুনানি অন্তে উল্লেখিত রুল ও আদেশ জারি করেন।
উল্লেখ্য, সরকার চট্টগ্রাম জেলাধীন ১৯৫,০০০ একর বনভূমিকে বন আইন, ১৯২৭ এর ৪ ধারার অধীন সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করার নিমিত্তে ২৪ মার্চ, ১৯৭৭ গেজেট প্রকাশ করে। এ ১৯৫,০০০ একর বনভূমির মধ্যে সীতাকুÐ উপজেলাধীন ৬২৭ একর উপকূলীয় বনায়নের উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রনালয় কর্তৃক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিকট ১৯৭৪ সালে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে সরকার এ ৬২৭ একরকে বন আইনের ৪ ধারায় সংরক্ষিত বন ঘোষনার জন্য গেজেট নোটিফিকেশন ইস্যু করে। এ ৬২৭ একরের মধ্যে (উত্তর সলিমপুর মৌজার বিএস দাগ নং ১) অন্তর্ভূক্ত। ৪ ধারায় প্রজ্ঞাপিত ৬২৭ একর বনভূমিতে বন বিভাগ ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থ বছরে সৃজিত বন বাগান গড়ে তোলে। প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ও সমুদ্র সিকস্তি ভূমি জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য ইজারা প্রদান হতে বিরত থাকতে ও উপকূলীয় বনভূমি রক্ষায় রয়েছে আদালতের একাধিক নির্দেশনা। ঈরারষ চবঃরঃরড়হ ভড়ৎ খবধাব ঃড় অঢ়ঢ়বধষ ঘড়. ১৪৫৭ ধহফ ১৪৫৮ ড়ভ ২০০৯-এ মহামান্য আপিল বিভাগ ০৬ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে প্রজ্ঞাপিত বনভূমি থেকে বিদ্যমান জাহাজ ভাঙ্গা ইয়ার্ডসমূহ সরিয়ে বনায়নের নির্দেশ দিয়েছেন যার ব্যয়ভার শিপ ইয়ার্ডের মালিকগণের নিকট থেকে আদায় করতে বলেছেন। একই আদেশে মহামান্য আদালত বনভূমি ভিন্ন উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার অনুকূলে ইজারা প্রদান হতে বিরত থাকতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ইজারা প্রদান না করতে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও সম্মানিত জেলা প্রশাসক, চট্রগ্রাম বিগত ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ বন আইনে প্রজ্ঞাপিত সীতাকুন্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বিএস দাগ নং ১ এর ৭.১০ একর জমি বিবিসি স্টিল লিঃ (স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম) এর অনুকূলে জাহাজ ভাঙ্গা ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ইজারা প্রদান করে। ০২ জানুয়ারি, ২০২০ হাইকোর্ট বিবিসি স্টিল লিঃ এর অনুকূলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত বিধায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন। হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত ০২ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখের রায় বহাল থাকার পরও একই জমি (উত্তর ছলিমপুর মৌজার বিএস ১ নং দাগ) জেলা প্রশাসন সমুদ্র সিকস্তি ভূমি দেখিয়ে বিবিসি স্টিল মিল লিঃ এর স্বত্বাধিকারীর স্ত্রীর নামে (কোহিনুর আক্তার) জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড নিমার্ণের জন্য ১৪ ফেব্রæয়ারি, ২০২২ আবারো ইজারা প্রদান করলে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইজারা প্রদানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা (নং ১১৪/২০২৩) দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ২৯ মে, ২০২৩ তারিখে জেলা প্রশাসন ইজারা চুক্তি বাতিল করলে আদালত অবমাননার মামলাটি “নট প্রেসড” করা হয়। কোহিনূর স্টিল লিঃ জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপীল করলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ও বন বিভাগের অনুপস্থিতিতে এবং কোনোরুপ মতামত গ্রহণ ব্যতিরেকে কোহিনূর স্টিল লিঃ এর প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিগত ২৪ মার্চ, ২০২৪ তারিখে সম্মানিত অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কোহিনুর স্টিল লিঃ এর অনুকূলে প্রদত্ত বনের জমির একসনা ইজারা পূর্ণবহাল করে যার প্রেক্ষিতেই বেলা মূলত আদালত অবমাননার মামলাটি দায়ের করে।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব কাজী মাঈনুল হাসান।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ২ জুন, ২০২৪।