দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ রক্ষায় গত ২৩ জানুয়ারী কক্সবাজারের হোটেল ইউনি রিসোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) “সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় করণীয়” শীর্ষক একটি মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ¯িথত ছিলেন অতি:জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ূন কবির। আরো উপস্থিত ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বেলার অন্যান্য কর্মকর্তা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
সভার প্রথম ভাগে সবার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পর্ব শেষে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভৌগালিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয় এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়েজন স্বার্থে বেলার মামলা (৬৮৪৮/২০০৯) এর পটভূমি ও মামলার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়।পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আদালত অবমাননার মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উপর একটি বেলা’র ধারণ করা একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। এই প্রামাণ্য চিতে দ্বীপটির বর্তমান চিত্র এবং দ্বীপ নিয়ে স্থানীয় মানুষজন কি ভাবছে তা তুলে ধরা হয়। এছাড়াও, দ্বীপের যত্রতত্র গড়ে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবংকিভাবে দ্বীপটির নির্মল পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রাধান্য পায় এই প্রামাণ্য চিত্রে ।
সভায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সেন্টমাটিন দ্বীপে তার নেয়া কিছু পদক্ষেপ ও নির্দেশনার তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তার বক্তব্যে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে এখনই যেই স্থাপনা আছে তা দ্বীপের ধারণ ক্ষমতার বাইরে তাই দ্বীপে নতুন করে আর কোন স্থাপনা করার কথা কল্পনা করা যায়না। সেন্টমার্টিনকে রক্ষার্থে দ্বীপের স্থানীয় মানুষজন, হোটেল মালিক,ট্যুর অপারেটর ও জাহাজ মালিক সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে ও সচেতন হতে হবে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষার্থে করণীয় সকল কিছু করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রস্তুত। তিনি বেলার কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন,‘পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোথাও বনবিভাগের কোনজায়গা নেই,যার ফলশ্রæতিতে দ্বীপের বনায়ন সম্ভব হচ্ছেনা। কিন্তু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যরক্ষায় এবং বিভিন্ন ঝড় তুফান থেকে দ্বীপকে রক্ষা করতে বনভূমি একান্ত প্রয়োজন।’
উপকূলীয় এলাকায় “ঝরহমষব টংব চষধংঃরপ” এর ব্যবহার বন্ধ করতে উচ্চ আদালত এর দেয়া নির্দেশনা এবং এই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে করণীয় বেলার কিছু প্রস্তাবনা তুলেধরেন বেলার হেডঅব প্রোগ্রামস্ মো. খোরশেদ আলম।
পরবর্তীতে মুক্ত আলোচনায় সভায় উপস্থিত হোটেল মালিক, ট্যুরঅপারেটর এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় করণীয় তাদের মতামত দেন,তারমধ্যে কিছুনি¤œরূপ-
- জাহাজ সংখ্যা কমানো
- উপকূলীয় বনায়ন করা
- হোটেল গুলোর বায়ো গ্যাসপ্ল্যান্ট তৈরী করা
- স্থাপনার ভৌত অবকাঠামো তৈরীতে পবিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা
- একজন পর্যটক যাতে বছরে একাধিক বার সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করা
- দ্বীপের কোন নিয়ম ভঙ্গ করলে পর্যটককে তার জন্য জরিমানা করা
- ঝরহমষব টংব চষধংঃরপ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরী করা
- দ্বীপেরভারসাম্য রক্ষার্থে অতিক্তি ভূ-গর্ভস্থ পানিউত্তোলনবন্ধকরা
- জেনারেটরের ব্যবহার বন্ধ করে সোলার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎউৎপাদন করা
পরিশেষে, বেলার প্রধান নির্বাহী সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মতবিনিময় সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।