আজ ১৪ আগষ্ট, ২০২২ তারিখ মহামান্য হাইকোর্ট জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনা কর্তৃক অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী উপায়ে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন বলাইশিমুল মৌজার ঐতিহাসিক খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবেনা এবং কেন ঐতিহাসিক বলাইশিমুল মাঠটিকে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হবেনা সে বিষয়ে কারণ দর্শাতে সরকারের উপর রুল জারী করেছেন। একইসাথে, মহামান্য হাইকোর্ট বলাইশিমুল মৌজার ঐতিহাসিক খেলার মাঠটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজের উপর ৩ (তিন) মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের ১৪ (চৌদ্দটি) টি সংস্থাকে আদেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে, এ বিষয়ে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট।
জনাব বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জনাব বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দ-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ৯৫০১/২০২২) প্রাথমিক শুনানী শেষে উপরের রুল জারী করেন।
বেলা-র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শ্রী অরবিন্দু কুমার রায়। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন যে সরকারের প্রস্তাবিত ৩৬টি ঘরের পরিবর্তে কেবল মাত্র ১২টি নির্মিতব্য ঘরই এ মাঠে থাকবে। এর প্রেক্ষিতে আদালত বলেন নি¤œ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন ক্ষমতার অপব্যবহার।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৩। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৪। মহাপরিচালক, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর; ৫। প্রকল্প পরিচালক, আশ্রয়ন-২ প্রকল্প; ৬। জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনা; ৭। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), নেত্রকোনা; ৮। রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, নেত্রকোনা; ৯। পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা; ১০। সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, নেত্রকোনা; ১১। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কেন্দুয়া উপজেলা, নেত্রকোনা; ১২। চেয়ারম্যান, কেন্দুয়া উপজেলা, নেত্রকোনা; ১৩। চেয়ারম্যান, ৮ নং বলাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা; ১৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি), কেন্দুয়া উপজেলা, নেত্রকোনা।
উল্লেখ্য যে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন বলাইশিমুল মৌজার “খেলার মাঠ” হিসেবে চিহ্নিত ১.৮০ একর ভূমি হতে ০.৪৬ একর ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আশ্রয়ন প্রকল্প করার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এলাকাবাসী খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন না করার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। এলাকাবাসীর আবেদন উপেক্ষা করে খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান রাখলে এলাকাবাসী ৩০ মে, ২০২২ তারিখে কেন্দুয়া সহকারী জজ আদালতে উল্লেখিত ভূমিতে এলাকাবাসীর বত্তর্¡স্বত্ত¡ ঘোষণা ও খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত শ্রেণি পরিবর্তনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দাবিতে একটি মামলা (নং ১০৯/২০২২) দায়ের করে। এ মামলায় গ্রামবাসীর নিষেধাজ্ঞার আবেদন বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত ০৫ জুন, ২০২২ তারিখে নামঞ্জুর করেন। গত ০৫ জুন, ২০২২ তারিখের আদেশে সংঘুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী মিস আপীল (নং ৩৬/২০২২) দায়ের করলে বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত ১৮ জুলাই, ২০২২ তারিখে ০৫ জুন, ২০২২ তারিখের আদেশ বহাল রেখে রায় প্রদান করেন এই যুক্তিতে যে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন। বেলা’র মামলার প্রাথমিক শুনানীকালে মহামান্য হাইকোর্ট ডেপুটি এটর্নী জেনারেলকে এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে নির্দেশ দেন।
এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় এলাকাবাসী বেলা’র নিকট আইনী সহযোগীতা চেয়ে আবেদন করলে জনস্বার্থে বেলা উল্লেখিত রীট পিটিশনটি দায়ের করে।
প্রয়োজনে আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট সুপ্রীমকোর্ট ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ১৪ আগষ্ট, ২০২২