১৯৭৪ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম জেলার ১ লক্ষ ৬৫ হাজার একর সমুদ্র সিকস্তি চরভূমি বনায়নের জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ১ লক্ষ ৬৫ হাজার একর ভূমি ২২ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ সালে সরকার সংরক্ষিত বন (জবংবৎাব ঋড়ৎবংঃ) ঘোষণার জন্য ৪ ধারায় গেজেট প্রকাশ করে। এর মধ্যে ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুÐ উপজেলার উত্তর সলিমপুর মৌজায় বন বিভাগ ৪০০ একর ভূমিতে বনায়ন করে।
বন আইনরে ৪ ধারায় গেজেটভুক্ত কোন বনভূমি বিরুদ্ধ ব্যবহার না করতে এবং জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের জন্য ইজারা প্রদান না করতে ইতোপূর্বে আপীল বিভাগ সিভিল পিটিশন নং-১৪৫৭/২০০৯, এবং ১৪৫৮/২০০৯-এ প্রদত্ত ৬ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখের এক নির্দেশ প্রদান করলেও সে নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম মোঃ কাশেম রাজার প্রতিষ্ঠান “বিবিসি স্টিল লিঃ” এর অনুকূলে উত্তর সলিমপুর মৌজার ৪০০ একর ঘন ম্যানগ্রোভ বনের ৭.১০ একর বন বনভূমি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য প্রথমে ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে সে চুক্তিনামা ২১ মার্চ, ২০১৯ আরও এক বছরের জন্য নবায়ন করেন। এ চুক্তিনামা ও নবায়ন চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থমূলক মামলা (রীট মামলা নং-১২৪৪০/২০১৯) দায়ের করে। এ রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে জনাব বিচারপতিমঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও জনাব বিচারপতি আশরাফুল কামালের একটি বেঞ্চ গত ১৩ মে, ২০১৯ তারিখে বনভূমিতেজাহাজভাঙা ইয়ার্ড নির্মাণের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। জনস্বার্থমূলক এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানী শেষে আজ (২ জানুয়ারি, ২০২০)জনাব বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও জনাব বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামান-এরসমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ “বিবিসি স্টিল লিঃ”-এর অনুকূলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং আপীল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি বিধায় প্রথম থেকেই অবৈধ ঘোষণা করেন। দেশের বনভূমির অব্যবস্থাপনা ও অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে মহামান্য আদালত বন আইনের ৪ ধারায় গেজেটভুক্ত কোন বনভূমি জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের অনুকূলে লীজ প্রদান না করতে সরকারকে নির্দেশ দেন। একইসাথে সরকারকে বন আইনের অধীনে গেজেটভুক্ত সকল বনভূমি সংরক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেন। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি মামলায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ুপরিবর্তন মন্ত্রণালয় আদালতে কোন বক্তব্য না রাখায় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন। একইসাথে বন বিভাগের লিখিত আপত্তি উপক্ষো করে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইজারা সম্পাদনকে আদালত আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত আখ্যা দিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে বন আইনের ২০ ধারায় চূড়ান্ত ঘোষিত হয়নি এ যুক্তিতে কোন বনের বিরুদ্ধ ব্যবহার করার পথ রুদ্ধ হলো। এ রায় রিজার্ভ ঘোষণার জন্য ৪ ধারায় বিজ্ঞপিত বনভূমি সংরক্ষণে সরকারকে বাধ্যবাধকতায় এনেছে।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেনএ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এ্যডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী ওসাঈদ আহমেদ কবীর।
মামলার বিবাদীগণ-সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়; সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; প্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর; পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম; জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম; পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম; উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সীতাকুÐ, চট্টগ্রাম; সহকারী কমিশনার(ভূমি), সীতাকুÐ, চট্টগ্রাম; মোঃ কাশেম রাজা, প্রোপ্রাইটর, বিবিসি স্টিল লিঃ, উত্তর সলিমপুর, সীতাকুÐ, চট্টগ্রাম।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
সাঈদ আহমেদ কবীর
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১২০৮০৮১
০২ জানুয়ারি, ২০২০