আজ (৩১ আগস্ট, ২০২৫) দূষণ ও দখল থেকে ধলেশ^রী নদী রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান, প্রচলিত আইন ও আদালতের রায়ের লঙ্ঘন বিধায় তা কেন বিধি-বহির্ভূত, বেআইনী ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। জারিকৃত এ রুলে সিএস জরিপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণপূর্বক তা রক্ষায় নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসাথে আদালত ঢাকা জেলার সাভার উপজেলাধীন দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজায় ধলেশ^রী নদীর অংশবিশেষে বিদ্যমান সকল স্থাপনা অপসারণ করে নদী পুনরুদ্ধারের এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী ধলেশ্বরী নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ঊঈঅ) ঘোষণা ও সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথাযথ সংরক্ষণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে আইন অনুযায়ী তদন্ত করে নদী দখল ও দূষণকারীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলাধীন দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার ধলেশ^রী নদীর অংশে অবস্থিত সকল স্থাপনা অপসারণপূর্বক নদীটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত ও তা আদালতে দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলার কার্যালয়ের উপপরিচালককে ধলেশ^রী নদী সংলগ্ন শিল্প-কারখানাগুলো বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) সহ অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি প্রতিস্থাপিত হয়েছে কিনা ও সচল আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের এ সকল আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৪ (চার) মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১১৪৭৭/২০২৫) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন এবং জনাব বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ধলেশ^রী নদী (আইডি নং: ঘঈ-২৭, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ২০১১) ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা নদী। দুইটি শাখা নদীতে বিভক্ত এ নদীর একটি শাখা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার হুসেইনদি ইউনিয়নে এসে মেঘনা (আপার) নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির গতিপথে বংশী, কালিগঙ্গা (মানিকগঞ্জ), গাজীখালী, ইছামতি (মানিকগঞ্জ), ইছামতি (সিরাজদিখান), বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা নদীগুলো মিলিত হয়েছে। ২৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে বছর ব্যাপী পানির প্রবাহ থাকে, যা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত একটি নৌ-পথ। দেশের অন্যান্য নদীর মতো দখল ও দূষণে জর্জরিত প্রাচীন এই নদী। সাভার উপজেলার দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার ভাগলপুর এলাকায় মনুমিয়ার ঘাট নামক স্থানে সিএস জরিপে যেখানে নদী রয়েছে ধলেশ^রীর সে অংশে এসএ দাগ নং ২৪৫, ২৪৬, ২৪৭, ২৪৮, ২৫০, ২৫১ (আরএস দাগ নং ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ২১১, ২১২, ৩৯৯, ৪০০, ৪০১, ৪০২, ৪০৩, ৪০৪, ৪০৫) সৃজন করা হয়েছে এবং সৃজিত এ দাগগুলোতে “শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম”সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যা নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। এছাড়াও নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাসমূহে ইটিপি সহ দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি কার্যকরভাবে চালু না থাকায় প্রতিনিয়ত অনিয়ন্ত্রিত দূষণে ধলেশ^রী নদী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্পদ হারাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নির্ধারিত নৌ পথ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে দখল ও দূষণ থেকে ধলেশ^রী নদী রক্ষায় বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সচিব; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
রুমানা শারমিন
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৬৭৪৯৩২৬৫২
৩১-০৮-২০২৫ ইং