-প্রেস বিজ্ঞপ্তি-
আজ (২৪ আগষ্ট, ২০২৫) কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য আদালত। একইসাথে মহামান্য আদালত এ নদীর সীমানায় বিদ্যমান সকল দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে আগামী ৪ (চার) মাসের মধ্যে তা উচ্ছেদের ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে নদীটিকে আগামী ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা ও সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত। পাশাপাশি পূর্বে প্রদত্ত রুল চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে আদালত নদী এবং নদী সংলগ্ন এলাকা ভিন্ন উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে, নদী এলাকার ম্যানগ্রোভ বন ফিরিয়ে আনতে এবং নদী এলাকায় ইতোপূর্বে প্রদানকৃত সকল ইজারা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। নদীটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়মিত তদারকির স্বার্থে মামলাটিকে আদালত চলমান মামলা (ঈড়হঃরহঁরহম গধহফধসঁং) হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি ৬(ছয়) মাস পর পর অর্থাৎ প্রতিবছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে উল্লেখিত নির্দেশ প্রতিপালন প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ৮৩২৫/২০১৪) চূড়ান্ত শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং জনাব বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দীকা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ উল্লেখিত আদেশ প্রদানের মাধ্যমে রায় ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদী বান্দরবান জেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী হিসেবে বাঁকখালী নদীর অবদান বহুমাত্রিক। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া যাতায়াতের প্রধান পথই ছিল এ বাঁকখালী নদী। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে বিভিন্ন এলাকার শত শত জাহাজ, ট্রলার এ নদীতে আশ্রয় নিত। বাঁকখালী নদীর দু’পারে অবস্থিত উপকূলীয় বনের সবুজ বেষ্টনী আশেপাশের জনবসতিকে রক্ষা করে আসছিল সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে। এ নদীতে একসময় প্রচুর পরিমাণে মহাশোল, চিংড়ি, বেলে, টেংরা, বাইট্টা এবং ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বিরল প্রজাতির লাল কাঁকড়া এ নদীতেই পাওয়া যেত । দেশের অন্যান্য নদীর মতো দখল, নদী সংলগ্ন এলাকায় তামাক চাষ, নদী উভয় তীরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের “কোস্টাল এÐ ওয়েটল্যাÐ বায়োডাইভারসিটি প্রকল্প” এর অধীন বনায়নের মাধ্যমে সৃষ্ট প্যারাবন কেটে সেখানে প্লট তৈরি করা ও স্থাপনা নির্মাণ করা ইত্যাদি নানা সমস্যায় নদীটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। অধিকন্তু কক্সবাজার পৌরসভার সকল ধরনের বর্জ্য নদীতে ফেলে নদীর তলদেশ ভরাট করা হয়েছে। শহরের হোটেল-মোটেলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছিল এ নদীতে। অবশেষে নদীর ব্যবহার বিরুদ্ধ সকল কর্মকান্ড ও অব্যবস্থাপনা থেকে নদীটিকে মুক্ত করে এর জৌলুস ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালে বেলা উল্লেখিত প্রতিকার চেয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে মামলাটি দায়ের করে। বেলা কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বানচাল করতে দখলকারীরা ২০২৩ সালে অপর একটি মামলা (নং ৫২২৪/২০২৩) দায়ের করে যা আজ খারিজ করেছেন আদালত।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ও কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক; কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক; কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (বর্তমানে প্রশাসক); কক্সবাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি)।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী ও এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না এবং তাঁদেরকে সহায়তা করেন এডভোকেট তৌহিদুল আলম ও এডভোকেট আসাদুল্লাহ আল গালিব এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব নূর মুহাম্মদ আজমী ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদুল হক।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৮৩৩০২৬২৬২
২৪-০৮-২০২৫ ইং