আজ (১১ আগস্ট, ২০২৫) নির্বিচারে দূষণ, দখল ও শ্রেণি পরিবর্তন থেকে গাজীপুর জেলাধীন কালীগঞ্জ, গাজীপুর সদর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী “বেলাই বিল” রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান, প্রচলিত আইন ও বিচারিক সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা অননুমোদিত, অবৈধ এবং জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। জারিকৃত এ রুলে বিলটি দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ; নর্থসাউথ গ্রপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রæপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লিঃ এবং এ্যাকুয়া বিলাসসহ বিলে বিদ্যমান সকল দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে বিলটি পুনরুদ্ধার, সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসাথে নির্বিচার দূষণ, অবৈধ ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তন করে বিলের ক্ষতি সাধন করায় দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে নর্থসাউথ গ্রপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রæপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লিঃ এবং এ্যাকুয়া বিলাস নামক আবাসন প্রকল্প কর্তৃক বেলাই বিলে ভরাট কার্যক্রমের উপর আগামী ৩ মাসের জন্য স্থিতাবস্থা আরোপ করেছেন। একইসাথে রাজউক এর চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তররের মহাপরিচালক এবং গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক; গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক; গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাশিয়া এবং কালিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে আরএস জরিপ অনুযায়ী বেলাই বিলের সীমানা নির্ধারণ এবং বেলাই বিল পুনরুদ্ধারে সকল দূষণ ও দখলকারীর তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে আদালত বিলের আশেপাশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে প্রদানকৃত পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তাবলী প্রতিপালন নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বেলাই বিল ও বিল সংলগ্ন নিচু কৃষি জমির অবস্থা জানতে এবং বেআইনী ও বিধি বহির্ভূত ভরাট কার্যক্রমের ফলে বিলের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণ করতে তদন্ত পরিচালনা করার এবং জলাশয় ও কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিহত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত। আদালতের উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৩ (তিন) মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ৯২৮৯/২০২৫) প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং জনাব বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুর জেলার সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় চারশত গ্রাম জুড়ে বেলাই বিলের বিস্তৃতি, যার আয়তন প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার। দেশের বিভিন্ন জলাশয়ের মতো দখল ও দূষণে চরম সংকটে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলটি। “বিল” শ্রেণির এ জলাশয়কে এক ফসলী জমি দেখিয়ে নর্থ সাউথ গ্রæপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রæপ, বাংলা মার্ক লিমিটেড, আমার বসতি, ইন্টেলিজেন্ট কার্ড নামক আবাসন প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকেই সাইনবোর্ড স্থাপনপূর্বক নির্বিচারে মাটি ভরাট করে চলেছে। এছাড়া একুতা ও মুলগাঁও অংশে “প্রাণ কোম্পানী লিঃ” এর সাইনবোর্ড রয়েছে। জয়দেবপুর থানায় “এ এন্ড এ ট্রাউজার লি” এবং বিলের মাঝখানে মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে চিহ্নিত অংশে “এ্যাকুয়া বিলাস রিসোর্ট” ভরাটের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিলের পানিকে দূষিত করছে। দূষিত পচাঁ পানিতে বেড়ে ওঠা কচুরীপানা বিলের পানি প্রবাহ হ্রাস করে মাছের উৎপাদন ব্যাহত করছে। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে অনেকে বালু ও মাটি ফেলে বিল দখল করে চলেছে।
উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষার্থে “বেলাই বিল” এর সীমানা নির্ধারণপূর্বক জলাশয়টি সংরক্ষণে উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – ভ‚মি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ; গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক; গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার; নর্থসাউথ গ্রপ, তেপান্তর, মাহাদী গ্রæপ, আমার বসতি, বাংলা মার্ক লিঃ আবাসন প্রকল্প এবং এ্যকুয়া বিলাস রিসোর্টেও ব্যবপস্থাপনা পরিচালক।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না, তাঁকে সহায়তা করেন এডভোকেট তৌহিদুল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব খাঁন জিয়াউর রহমান।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৮৩৩০২৬২৬২
১১-০৮-২০২৫ ইং