আজ (১০ আগস্ট, ২০২৫) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু ও উখিয়া উপজেলাস্থ সংরক্ষিত এবং রক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে এবং সন্নিকটে বিদ্যমান নয়টি বালুমহাল বিধিবহির্ভূতভাবে ইজারা প্রদানের উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করা সংবিধান ও অন্যান্য আইনের পরিপন্থী বিধায় কেন তা বেআইনি, আইনী কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের প্রতি রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। জারিকৃত এ রুলে মহামান্য আদালত উল্লিখিত বালুমহালগুলো বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে এবং ইজারাযোগ্য বালুমহালের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে সংরক্ষিত এবং রক্ষিত বনাঞ্চল সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। একইসাথে বালু উত্তোলনের ক্ষতি নিরুপণপূর্বক প্রকৃত দোষি ব্যক্তিদের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত নয়টি বালুমহালের (কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী মৌজার খুটাখালী-১; রামু উপজেলার ধোলিরছড়া মৌজার ধলিরছড়া এবং পানিরছড়া খাল; উখিয়া উপজেলার উখিয়ার ঘাট মৌজার বালুখালী-১, উয়ালাপালং এবং রাজাপালং মৌজার দোছড়ি বালুমহল, পালংখালী মৌজায় পালংখালী; রাজাপালং মৌজার হিজলিয়া; রাজাপালং মৌজার ধোয়াংগারচর ও কুমারিয়ারছড়া বালুমহাল) ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। সেইসাথে অনতিবিলম্বে উল্লেখিত নয়টি বালুমহাল যা সংরক্ষিত এবং রক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে এবং সন্নিকটে বিদ্যমান তা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রধান বন সংরক্ষক; কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; কক্সবাজার জেলার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি উল্লেখিত বন এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের সহিত জড়িত ইজারা গ্রহীতাসহ অন্যান্য দোষী ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত এবং বালু উত্তোলনের ফলে উল্লেখিত বনের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণ করে প্রতিবেদন আকারে তিন মাসের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (মামলা নং ১২১৭৪/২০২৫) প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং জনাব বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দীকা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কক্সবাজার জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ২৭টি বালুমহালের তালিকা প্রস্তুত করে তা ২০২৫-২০২৬ ( ১৪৩২ বঙ্গাব্দের) সালের জন্য ইজারা প্রদানের উদ্দেশে বিগত ১১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে দরপত্র আহবান করেন। উল্লিখিত ২৭টি বালু মহালের মধ্যে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী মৌজার খুটাখালী-১; রামু উপজেলার ধোলিরছড়া মৌজার ধলিরছড়া এবং পানিরছড়া খাল; উখিয়া উপজেলার উখিয়ার ঘাট মৌজার বালুখালী-১, উয়ালাপালং এবং রাজাপালং মৌজার দোছড়ি বালুমহল, পালংখালী মৌজায় পালংখালী; রাজাপালং মৌজার হিজলিয়া; রাজাপালং মৌজার ধোয়াংগারচর ও কুমারিয়ারছড়া বালুমহালগুলো সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের মধ্য ও সন্নিকটে হওয়ায় এবং সেখানে উত্তোলনযোগ্য বালু না থাকায় সংশ্লিষ্ট বনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার সম্ভাব্য ক্ষতি বিবেচনা করে উক্ত বালুমহালগুলো ইজারা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাগণ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করেন। উক্ত অনুরোধ উপেক্ষা করেই তিনটি বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্যগুলোর ইজারা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন রক্ষায় উল্লিখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ও কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক; কক্সবাজার জেলার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা; কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া, রামু ও উখিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মোঃ গোলাম রহমান ভুঁইয়া।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৮৩৩০২৬২৬২
১০-০৮-২০২৫ ইং