আজ (০২ মার্চ, ২০২৫) দূষণ থেকে ময়মনসিংহ জেলার বানার নদী রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা, সংবিধান, প্রচলিত আইন ও আদালতের রায়ের লঙ্ঘন বিধায় তা কেন বিধি-বহির্ভূত, বেআইনী ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। একইসাথে বানার নদীকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা মতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও নিয়ন্ত্রণ করার, সিএস ম্যাপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ পূর্বক যথাযথ সংরক্ষণ ও দূষণ প্রতিরোধ করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ময়মনসিংহ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে আইন অনুযায়ী তদন্ত করে নদী দূষণকারীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করার; ময়মনসিংহের ত্রিশালের ডেসডেন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনতিবিলম্বে কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করার এবং বানার নদীর পার্শ্ববর্তী সকল শিল্প-কারখানাসমূহে ইটিপি সহ দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি চালু আছে কিনা তা ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ময়মনসিংহ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য আদালত। একইসাথে আদালতের আদেশ পালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৩ (তিন) মাসের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১৫৫৭২/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং জনাব বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, জামালপুর জেলার সদর উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে পুরাতন ব্রহ্মপ্রত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ “বানার আপার” নদী (আইডি নং: ঘঈ-৪৪, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার আমিরবাড়ি ইউনিয়নে খিরো (ত্রিশাল) নদীতে পতিত হয়েছে। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ “বানার লোয়ার” নদী (আইডি নং: ঘঈ-৪৫, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার অন্তর্গত টেংগাবা ইউনিয়নে পুরাতন ব্রহ্মপ্রত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীতে পতিত হয়েছে। দেশের ৫৬টি দূষিত নদীর মধ্যে বানার লোয়ার নদী অন্যতম। শিল্প বর্জ্যরে দূষণে এ নদীর পানিতে উঙ, ইঙউ, ঈঙউ এর মাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় বর্ণিত গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার বাইরে। অব্যাহত রাসায়নিক বর্জ্যের দূষণে বানার লোয়ার নদী জলজ প্রাণী ও মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় এর পানি ব্যবহারকারীরা পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এবং আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগসহ নানা অসুখে। দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ; ময়মনসিংহের ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; ময়মনসিংহের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালের ডেসডেন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট রুমানা শারমিন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব তানিম খান।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৮৩৩০২৬২৬২
০২-০৩-২০২৫ ইং