আজ (২৬ নভেম্বর, ২০২৪) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ও ২৭১২ একর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ইজারা প্রদানের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত ইজারা চুক্তি এবং ৪৯১৬ হেক্টর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ধ্বংস, বাণিজ্যিক ও বন বিরুদ্ধ ব্যবহার থেকে রক্ষার ব্যর্থতাকে কেন সংবিধানের পরিপন্থি, আইনবহির্ভূত, আইনগতভাবে কর্তৃত্বহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। জারিকৃত এ রুলে বনভূমির যথাযথ সংরক্ষণের জন্য বনভূমি বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর; বনভূমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার যথাযথ সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার; বনভূমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ধ্বংসের সাথে জড়িত অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের; বন, প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও বিবাদীগণের নিকট জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত উল্লেখিত ইজারা চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে আদালত কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় গাছ কাটা এবং চিংড়ি ঘের নির্মাণ বন্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ও ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমির যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরুপণ করে প্রতিবেদন আকারে এবং একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তৈরি করে তা ৬ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১২৩৯০/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং জনাব বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাধীন সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর এলাকা ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৯ এ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ঊপড়ষড়মরপধষষু ঈৎরঃরপধষ অৎবধ) হিসেবে ঘোষণা করা হয় যেখানে প্রাকৃতিক বন ও গাছ কর্তন; উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসকারী সকল কার্যক্রম এবং ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ০৩ মে, ১৯৯৯ এ অপর একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ২১২১.৯৬ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার আওতা বহির্ভুত করা হলে বেলা তা চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ৪২৪৬/২০০৩) দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে বিগত ০৬ জুলাই, ২০০৩ এ সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর এলাকায় ইজারা বা দ্বীপ ধ্বংসকারী সকল কার্যক্রমের অনুমোদন স্থগিত করেন যা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ রাখেন মহামান্য আদালত। আদালতের এহেন সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও সোনাদিয়া দ্বীপের ৯৪৬৬.৯৩ একর জমি (সোনাদিয়া মৌজার ৩১৯১.৭০ একর এবং ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৪৮১০ একর) যারমধ্যে ২৭১২ একর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার কর্তৃক বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (ইঊতঅ) কে ইজারা প্রদান করা হয়।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, মহেশখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মহেশখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব তানিম খান।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা।
মোবাইলঃ ০১৮৩৩০২৬২৬২
২৬-১১-২০২৪ ইং