আজ (১৪ জানুয়ারি, ২০২৩) ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অর্ন্তগত চান্দুলিয়া, কন্ডা এবং কান্দিবলিয়ারপুর মৌজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বামনী খাল রক্ষায় জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং কর্তৃক অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাটসহ সকল কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে মহামান্য হাইকোর্ট। একই সাথে উল্লেখিত আবাসন কোম্পনীগুলো কর্তৃক ইতোমধ্যে কি পরিমাণ জমি ভরাট করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত।
সেইসাথে জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং কর্তৃক অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাট হতে বামনী খাল এবং খাল সংলগ্ন জলাশয় ও কৃষিজমি রক্ষা ও সংরক্ষণে বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বিধায় কেন তা অবৈধ, জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। রুলে আইন ও বিধি অনুযায়ী বামনী খাল, খাল সংলগ্ন জলাশয় ও কৃষিজমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং সংরক্ষণে বিবাদীগণকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
আবাসন প্রকল্পসমূহ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) চিহ্নিত জলাশয় ভরাট করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ও ছাড়পত্র গ্রহণ ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছিলো। পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলা কার্যালয় থেকে জমজম নূর সিটি কে বিগত ২১ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে ২৩ লক্ষ টাকা এবং রাজউক থেকে বিগত ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করার পরও আবাসন প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে কোম্পানীটি। অবৈধ আবাসন প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম বন্ধে ও সাভারের বামনী খাল রক্ষায় মহামান্য আদালত আজ এ রুল ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), ব্লাস্ট এবং নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান – কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ১৬২২২/২০২৩) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলাধীন সাভার উপজেলার চান্দুলিয়া মৌজার আরএস দাগ নং ১, ৭০; কন্ডা মৌজার আরএস দাগ নং ৩৬৫, ৩৯০ এবং কান্দি বলিয়ারপুর মৌজার আরএস দাগ নং ৫ খাল হিসেবে চিহ্নিত। স্থানীয় এলাকাবাসীর নিকট উল্লেখিত দাগে অবস্থিত খালটি “বামনী খাল” হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খাল একসময় কর্ণপাড়া খাল ও তুরাগ নদীর সংযোগ খাল হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছিল। স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনেও এ খালের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। মনুষ্যসৃষ্ট নানামূখী কর্মকা-ে এ খাল মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ খাল ভরাটকারীদের শীর্ষে রয়েছে জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং লিঃ। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আবাসন কোম্পানীগুলো বামনী খাল ও এ খালের আশেপাশে বিদ্যমান জলাধার, নালজমি ও কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জলাশয় ও কৃষি জমি রক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। জলাশয় এবং কৃষি জমি সংরক্ষণে রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং জলাশয় বালু দ্বারা ভরাট করে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করার ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে আইনী বাধ্যবাধকতার তোয়াক্কা না করে কোনোরূপ অনুমোদন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে খাল, জলাশয় ও কৃষি জমি ভরাট করে জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং নামক আবাসন প্রকল্প বন্ধে এবং বামনী খাল যথাযথ সংরক্ষণে বেলাসহ ৬ টি পরিবেশবাদী সংগঠন ও একজন ব্যক্তি উল্লেখিত মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলার উপ পরিচালক, সাভারের সহকারি কমিশনার (ভূমি), জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধ্যা হাউজিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি এর্টণী জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট শামিমা নাসরিন এবং এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২
১৪ জানুয়ারি, ২০২৩