গত ২৫ জুন, ২০২৩ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কক্সবাজার জেলাধীন জিলনজা মৌজার বিএস ১৭০৭০ নং দাগে ৫.০০ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকগণের আবাসনের জন্য বরাদ্দ প্রদান না করে বিকল্প উপযুক্ত স্থানে বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানিয়ে সরকারের ৮ টি সংস্থাকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছে। লিগ্যাল নোটিশে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন করেছে এখানকার ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় ও টিলাসমূহ। নগরীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে ও পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে নগরীকে রক্ষা করতে পাহাড় ও টিলাসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে এ জেলার ১০,৪৬ হেক্টর এলাকাকে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সেখানে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকার কর্তৃক ঘোষিত কক্সবাজার জেলাধীন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অন্যান্য মৌজার মধ্যে রয়েছে জিলনজা মৌজা। এ মৌজার বিভিন্ন দাগে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবেদন সৃষ্টিকারী ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়/টিলাসমূহ। জিলনজা মৌজার বিএস ১৭০৭০ নং দাগে ৪৯.৯৭ একর পাহাড় শ্রেণির জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার এর পক্ষে রেকর্ড রয়েছে। বিগত ০৫ মে, ২০১০ তারিখের জে:প্র:/কক্স/রাজস্ব/২-১৬৬/২০০৭-১০০৭ স্বারকবাহী এক পত্রের মাধ্যমে দেখা যায় জিলনজা মৌজার বিএস ১৭০৭০ নং দাগের ৫.০০ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকগণের আবাসনের জন্য বরাদ্দ প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সাংবাদিকগণের আবাসনের জন্য ভূমি বরাদ্দ প্রদান জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ না হওয়া সত্তে¡ও পাহাড় শ্রেণির ভূমিতে আবাসনের প্রস্তাব বাতিল না করে বরং তা নথিভুক্ত করা হয়েছে যা দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
স্বল্প পরিমাণ পাহাড় রক্ষার কোনো বিকল্প নেই এ উপলব্ধি থেকে দেশের বিবেক খ্যাত সাংবাদিকগণ, পরিবেশবাদীগণ, দেশের আইন ও আদালত পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দেশের সাংবাদিকগণই সাহসের সাথে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সংবাদের মাধ্যমে জাতীর নিকট তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এমতাবস্থায় পাহাড় কেটে সাংবাদিকদের আবাসন তৈরি হলে তা জাতীর নিকট খারাপ দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করবে ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। সাংবাদিকগণের আবাসনের দাবি সর্বাবস্থায় যৌক্তিক তবে, তা পাহাড় কেটে নয়। বিকল্প কোনো অকৃষি খাস জমিতে সাংবাদিকগণের আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকগণ কোনো আপত্তি থাকবে না মর্মে ধরে নেয়া যেতে পারে।
দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিত পাহাড় কর্তন/মোচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অধিকন্তু কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহে অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (মামলা নং ৭৬১৬/২০১১) ১৯ মার্চ, ২০১২ তারিখের রায়ে আদালত উল্লেখিত জেলাসমুহে অবস্থিত সকল পাহাড় কর্তন বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিগত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ এ মহামান্য আদালত সকল পাহাড়ের তালিকা (দাগ, খতিয়ানসহ) এবং পাহাড়সমূহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও তা আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন (সংযুক্ত)। একইসাথে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বশেষ বিদ্যমান পাহাড়গুলোকে আরো ক্ষতি, ধ্বংস ও কর্তন হতে রক্ষার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, পাহাড় কাটা বিষয়ে আদালতের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রতিটি পাহাড়ে প্রদর্শন করা এবং ইতোমধ্যে কর্তন করা হয়েছে এমন পাহাড়গুলোতে দেশিয় প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ এবং দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
আইনী বিধি নিষেধ ও আদালতের ষ্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজার জেলায় নতুন করে পাহাড় কেটে কোনো উন্নয়নের সুযোগ নেই বিধায় সাংবাদিকগণের আবাসনের জন্য বিকল্প কোনো স্থানে ভূমি বরাদ্দ প্রদানের কোনো বিকল্প নেই।
যাদেরকে নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে- ১। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ৩। সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; ৪। বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম; ৫। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৬। জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার; ৭। পুলিশ সুপার, কক্সবাজার; ৮। পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা।
নোটিশটি প্রেরণ করেছেন বেলা’র আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২