আজ (১৫ মার্চ, ২০২১) মহামান্য হাইকোর্ট হবিগঞ্জ জেলাধীন মাধবপুর উপজেলাস্থ নোয়াপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত শাহ্পুর নামক স্থানে “মার লি:” নামক কোম্পানীর অননুমোদিত, বিপজ্জনক ও দূষণ কার্যক্রম প্রতিরোধে বিবাদীগণের ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা, শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে বর্তমান স্থান থেকে ঘোষিত কোন শিল্প এলাকায় স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হবেনা এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের দূষণ থেকে এখতিয়ারপুর নামক খাল রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবেনা তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন।
বিচারপতি জনাব মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি জনাব মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ৮৭৬১/২০২০) প্রাথমিক শুনানী অন্তে এ রুল জারি করেন। একইসাথে আদালত মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২ নং (মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর), ৩ নং (জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ), ৫ নং (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধবপুর, হবিগঞ্জ), ৬ নং (পরিচালক (মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট), পরিবেশ অধিদপ্তর) ও ৭ নং (পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট) বিবাদীগণকে উল্লেখিত কোম্পানীর সকল কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে উল্লেখিত বিবাদীগণকে কোম্পানী কর্তৃক উল্লেখিত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতি নিরূপণ সাপেক্ষে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য “মার লি:” নামক একটি কোম্পানীটি মূলত ড্রাই স্টার্চ পাউডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কারখানার কার্যক্রমের ফলে প্রচুর পরিমাণে তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কারখানা সৃষ্ট তরল বর্জ্য কোনরূপ শোধন ছাড়াই পাশ্ববর্তী এক্তিয়ারপুর খালে নির্গমণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইটিপি কার্যকরকরণ ব্যতিরেকে দূষিত বর্জ্য পাশ্ববর্তী এক্তিয়ারপুর খালে নির্গমণ করায় খালের পানি সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়ে পড়ে। কারখানা সৃষ্ট দূষিত পানি ও অপরিশোধিত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে ছাতিয়াইন ইউনিয়নের শ্রমিতপুর, দাসপাড়া, ছাতিয়াইন উত্তর, ছাতিয়াইন দক্ষিণ, সাকুচাইল, পিয়াইম, শিমুলঘর গ্রামসহ আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য উপজেলাধীন একাধিক গ্রামের বাসিন্দাগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অসহনীয় এ দূষণের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, রাস্তা অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালন করে। ইতোপূর্বে উল্লেখিত কোম্পানীর ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ এবং এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৭ সালে ১৭ লক্ষ ১০ হাজার এবং পরবর্তীতে পূনরায় ২০১৮ সালে পয়ত্রিশ লক্ষ ৭ হাজার ৮ শত চল্লিশ টাকা জরিমানা ধার্য করে। তারপরেও উক্ত কোম্পানীর বেআইনী কার্যক্রম চালু থাকলে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় উক্ত কোম্পানী কর্তৃক পরিবেশ দূষণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর বারবার উপস্থাপন করে ব্যর্থ হয়ে আইনগত সহায়তা চেয়ে বেলা বরাবর আবেদন জানালে বেলা অত্র রিট মামলাটি দায়ের করে।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাকে সহায়তা করেন সাঈদ আহমেদ কবীর।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ২। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৩। জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ; ৪। পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ; ৫। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধবপুর, হবিগঞ্জ; ৬। পরিচালক (মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট), পরিবেশ অধিদপ্তর; ৭। পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট; ৮। উপজেলা চেয়ারম্যান, মাধবপুর উপজেলা পরিষদ, হবিগঞ্জ; ৯। অফিসার ইন চার্জ, মাধবপুর থানা, হবিগঞ্জ; এবং ১০। স্বত্তাধিকারী, মেসার্স মার লিমিটেড।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
সাঈদ আহমেদ কবীর
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১২০৮০৮১
তারিখঃ ১৫ মার্চ, ২০২১