পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতি নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে সি.এস. ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণপূর্বক অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবেনা; ক্ষতিকর স্থাপনা অপসারণ করে কেন নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করা হবেনা এবং কেন নদী দূষণ রোধ করা হবে না তা জানতে রুল জারী করেছে আদালত। আজ (১২ জানুয়ারি, ২০২০) জনাব বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও জনাব বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং-১০৭/২০২০) প্রাথমিক শুনানী অন্তে এ রুল জারি করেন। একইসাথে ইছামতি নদীর দখল ও দূষণকারীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে আগামী তিন (৩) মাসের মধ্যে আদালতের দাখিলের জন্য ৪, ৭, ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ নং বিবাদীগণের উপর নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য পাবনা জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইছামতি নদী আজ দখল ও দূষণে জর্জরিত। পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের ভাঁড়ারা নামক স্থানে এবং হেমায়েতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর নামক স্থানে দুইটি ¯øুইস গেট তৈরির পর থেকে এ নদীকে মৃত্যুর মূখে ফেলে দেয়া হয়েছে। নির্মিত ¯øুইসগেট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ না করতে পারায় এ নদীর প্রবাহ কমে পাবনা শহর এলাকায় নদীটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত আবদ্ধ পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। নদী দখল করে উভয় পাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা, বাড়ি-ঘর ও কল-কারখানার বর্জ্য, পয়:বর্জ্য এ নদীতেই ফেলা হচ্ছে নিয়মিত। ইতোমধ্যে পাবনা সদর উপজেলার শুধুমাত্র পৌরসভা এলাকার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ২৮৫টি এবং সাঁথিয়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নে মোট ৬৬টি অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পাবনাবাসীর প্রাণ সদৃশ এ নদী রক্ষায় এলাকাবাসী ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এ আন্দোলনের মূল দাবিসমূহ হচ্ছে- নদীদস্যুদের অবৈধ দখল হতে ইছামতিকে মুক্ত করতে হবে; খনন করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে; নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে; দুই পার্শ্বের পাড় নিশ্চিত করতে হবে (পায়ে হাটা রাস্তাসহ); দুইধারে বসার ব্যবস্থা করে নগর পরিকল্পনা করতে হবে; কলকারখানার বর্জ্য শোধন ছাড়া নদীতে ফেলা যাবেনা; ক্লিনিক্যাল বর্জ্য কোনমতেই নদীতে ফেলা যাবেনা; শহরের যানযট কমাতে আধুনিক নৌযান সার্ভিস চালু করতে হবে; নদীকে পর্যটন মডেলে পরিণত করতে হবে; শোভা বর্ধনের জন্য নদীর দু’ধারে ঔষধীবৃক্ষসহ বনায়ন করতে হবে উল্লেখিত দাবিসমূহ এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর উপস্থাপন করে ব্যর্থ হয়ে ইছামতি রক্ষায় আইনগত সহায়তা চেয়ে বেলা বরাবর আবেদন জানালে বেলা অত্র মামলাটি দায়ের করে।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং তাকে সহায়তা করেন সাঈদ আহমেদ কবীর।
মামলার বাদীগণ- ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রনালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়; ৩। সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়; ৪। চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; ৫। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৬। মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; ৭। জেলা প্রশাসক, পাবনা; ৮। পুলিশ সুপার, পাবনা; ৯। নির্বাহী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাবনা; ১০। পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর (রাজশাহী বিভাগ); ১১। উপ পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা কার্যালয়, পাবনা; ১২। মেয়র, পাবনা পৌরসভা; ১৩। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পাবনা সদর উপজেলা, পাবনা; ১৪। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আটঘরিয়া উপজেলা, পাবনা; ১৫। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাঁথিয়া উপজেলা, পাবনা; ১৬। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বেড়া উপজেলা, পাবনা।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
সাঈদ আহমেদ কবীর
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১২০৮০৮১
তারিখঃ ১২ জানুয়ারি, ২০২০