“কীর্তনখোলা নদী সংরক্ষণে করণীয়” শীর্ষক
আলোচনা সভা।
স্থান: জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষ, বরিশাল।
তারিখ: ২৯ অক্টোবর ২০১৯
প্রতিবেদনঃ ৩০ অক্টোবর ২০১৯
২৯ অক্টোবর ২০১৯ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি “বেলা” বরিশালের আয়োজনে “কীর্তনখোলা নদী সংরক্ষণে করণীয়’’ শীর্ষক আলোচনা সভা বরিশাল জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব এস এম ইকবাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপ¯িত’ ছিলেন বরিশালের মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব এস. এম. অজিয়র রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ¯িত’ ছিলেন জনাব মোঃ আজমল হুদা মিঠু সরকার, উপ-পরিচালক, বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, নদী বন্দর, বরিশাল ও জনাব মোঃ রাকিব উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উনড়বয়ন বোর্ড, বরিশাল। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব মোঃ রফিকুল আলম, নির্বাহী পরিচালক ‘রান’ এবং নেট মেম্বর বেলা। সভার শুরুতে ¯া^ গত বক্তব্য রাখেন জনাব লিংকন বায়েন, বিভাগীয় সমন্বয়কারী, বেলা, বরিশাল। সভায় অন্যান্যের মধ্যে মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন জনাব ডাঃ সৈয়দ হাবিবুর রহমান, রনজিৎ দত্ত, কহিনুর বেগম, মোঃ নসির উদ্দিন, পুলক চ্যাটার্জী, মোঃ মনিরুজ্জামান ও সাঈদ পাš ’ প্রমূখ। সভায় বক্তাগন বলেন, বরিশালের রূপ সৌন্দর্যের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে এ অঞ্চলের নদী ও খাল। এই নদী পথেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে বরিশালের এবং বরিশাল জেলা শহরের সাথে খুলনা সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ষ্টীমার-লঞ্চ সার্ভিসের মাধ্যমে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী নদী কীর্তনখোলা। এক সময় এই নদীর রূপসৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ বলেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সময়ের বিবর্তনে কীর্তনখোলার সেই সৌন্দর্য ধূয়ে মুছে গেছে। স্রোতস্বিনী উন্মুক্ত এ নদীর তীরে তীরে এখন গড়ে উঠেছে বহু অবৈধ স্থাপনা, শিল্প ও বর্জ্য দূষণ μমাগত চলছেই। পরিকল্পিত খননের অভাবে এখন নৌ যোগাযোগ সংকটে পড়েছে। খালগুলোর উৎসমুখে পলিজমে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় কৃষিকাজ ব্যহত হচ্ছে। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে নদী ভাঙ্গন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে কীর্তনখোলা নদী রক্ষায় নানা সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি করনীয় নির্ধারনও তুলে ধরেছেন। বক্তব্যে যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে তা হল: ১। নদীর সঠিক সীমানা না থাকায় নদীর তীরভূমি দখল ও অবৈধ লীজ প্রদান ২। নদীতে বিভিনড়ব ধরনের বর্জ্য অপসারনঃ যেমন-শিল্প-কারখানার তরল ও রাসায়নিক বর্জ্যসমূহ ইটিপি ছাড়াই নির্গমন ৩। কোন ধরনের পরিশোধন ব্যতিত নগরীর স্যুয়ারেজ বর্জ্য নির্গমন ৪। যাত্রীবাহী নৌযানের পোড়াতেল-মোবিল অপসারন ৫। পলিথিন নিক্ষেপ ও মনুষ্য বর্জ্য সরাসরি নির্গমন ৬।নদীর তলদেশ ভরাট যে কারণে নদীর আঁকাবাঁকা চলা ও গতিপথ পরিবর্তন ৭। সমীক্ষা ছাড়া নদী হতে অবৈধ বালু উত্তোলন ও বালু ব্যবস্থাপনার অভাব ৭। সমন্বয়হীন ড্রেজিং এবং ৮। আইন, নীতিমালা ও বিধিমালার প্রায়োগিক দূর্বলতা।
স্থানীয় পর্যায়ে উপরে উল্লিখিত সমস্যা নিরসনে বক্তারা বলেন-
১। সমন্বিত ডে্ির জং ব্যবস্থায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে নদীর সাথে শাখানদী-খালের মোহনাকে সচল করতে হবে।
২। নদীতে কোন অবস্থাতে শিল্প-কারখানার রাসায়নিক, কঠিন, প্লাষ্টিক, পলিথিন, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলা যাবে না।
৩। নদী-খাল দখল ও দূষণ রোধে ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কোর্ট’ গঠন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৪। বালুমহাল ঘোষণার পূবের্ অবশ্যই সমীক্ষা যাচাই করতে হবে।
৫। কোন ভাবেই উন্মুক্ত জলাধারকে বদ্ধ জলাধার সাজিয়ে লীজ প্রদান করা যাবে না।
৬। নদী খালের উপর সকল ধরনের অবকাঠামোগত পরিকল্পনা গ্রহনের পূবের্ অবশ্যই ইআইএ, এসআইএ ইত্যাদি কর্মসম্পাদন,
৭। নগরীর মধ্যে অবস্থিত ঔষধ শিল্প কারখানাগুলো নির্দিষ্ট শিল্প জোনে দ্রæত স্থানাšÍে রর মাধ্যমে সিইটিপি’র আওতায় আনা এবং
৮। উচ্চ আদালত কর্তৃক ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’-কে ‘‘নদীর অভিভাবক’’ ঘোষণার কার্যকারিতায় নিবার্হ ী ক্ষমতা অর্পন করতে হবে বলে তারা মতামত প্রদান করেন’’। বিশেষ অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন- কীর্তনখোলার দখল-দূষণ ও ভাঙ্গন রোধে এবং এ নদীর নাব্যতা রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে সি.এস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহ্নিতকরনসহ তালিকাভূক্ত দখলদার সহ সকল অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে। এই উচ্ছেদ কার্যμম পরিচালনার সময় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহŸান জানিয়েছেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমরা বসে নেই। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরিশালের নদী খালের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ অচিরেই শুরু হবে। কথা নয় কাজ দিয়ে আমরা প্রমান রাখতে চাই। কীর্তনখোলাকে দখল-দূষণ মুক্ত করে শুধু কীর্তখোলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট যে দপ্তরগুলো রয়েছে তার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কীর্তনখোলার সীমানা চিহ্নিত করে দখল উচ্ছেদ কার্যμম পরিচালনা করা হবে। বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে এই কীর্তনখোলাকে ঘিরে। তাই আমরা সবাই মিলে কীর্তনখোলাসহ বরিশালের নদীগুলো রক্ষায় কাজ করে যেতে চাই’’। সভাপতি তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন- মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। অথচ এই পানি ব্যবস্থাপনায় আমরা উদাসীন। কীতর্ন খোলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বরিশালের ব্যবসা-বানিজ্য, নগর সভ্যতা, নৌ-যোগাযোগ ও কৃষিকার্যμম। অথচ এই নদীর এখন বেহাল অবস্থা। সুতরাং এই নদী রক্ষায় এখনই আমাদের সোচ্চার হতে হবে ও আরো আন্তরিক হতে হবে। আলোচনা সভায় মোট ১০৪ জন অংশগ্রহনকারী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১০ জন নারী এবং ৯৪ জন পুরুষ।