‘‘শিববাড়িয়া নদী সংরক্ষণ’’ শীর্ষক
উপকারভোগী সমন্বয় সভা
স্থান: পর্যটন হলিডে হোমস, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী।
তারিখ: ৬ নভেম্বর ২০১৯
প্রতিবেদন তৈরী: ১১ নভেম্বর ২০১৯
৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বরিশালের আয়োজনে ‘‘শিববাড়ীয়া নদী সংরক্ষণ’’ শীর্ষক উপকারভোগী সমšয়^ সভা পর্যটন হলিডে হোমস মিলনায়তন, কুয়াকাটা, পটয়ু াখালীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুয়াকাটার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সবর্জ ন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব নাসির উদ্দিন বিপ্লব এর সভাপতিতে ¡ অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে বেলা বরিশাল অফিসের সমন্বয়কারী জনাব লিংকন বায়েন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য বন্দরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে শিববাড়িয়া নদী। যার স্থানীয় নাম খাপড়াভাঙ্গা। এটা মূলতঃ একটি পোতাশ্রয়। যখন প্রকৃতি বিরূপ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে তখন বঙ্গোপসাগরের শত শত জেলে নৌকা অর্থাৎ মাছ ধরার ট্রলার এ নদীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই পোতাশ্রয়টি কুয়াকাটার গঙ্গামতি এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপত্তি হয়ে আবার আন্ধার মানিক মোহনায় ফাতরার চরের নিকট বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশেছে। দুই মোহনা দিয়েই জেলেরা এই পোতাশ্রয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেইসাথে এখানে গড়ে উঠেছে সুবিশাল মৎস্যবন্দর। সবদিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি দিনে দিনে লিজপ্র ার নামে কিছু প্রভাবশালী দখলবাজের দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছিল। প্রশাসন সবকিছু জেনেও নীরব ভূমিকা পালন
করেছে। কখনও কখনও লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা ঠিকই বহাল ছিল। যে কারনে ‘বেলা’ স্থানীয় জনতার আবেদনের প্রেক্ষিতে দখল উচ্ছেদে উচ্চ আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। মামলা পরবর্তী সময়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে, এ নদীর সাথে সম্পৃক্ত তৃনমূল পর্যায়ের মানুষের মতামত ও এ অবস্থায় বেলা’র করনীয় বিষয়ে মূলতঃ এ উপকারভোগী সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়েছে। উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা দখল উচ্ছেদে বেলা’র আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সকলেই বেলা’কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সাথে সাথে বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এখন বড় বড় দখলদার না থাকলেও দু’চারজন নদীর জমি দখলে নেয়ার
নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। দখলের চেয়ে এখন বড় যে সমস্যা তা হলঃ শিববাড়ীয়া নদীর মোহনা (চরচাপলী) দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের ৩০০ ফিটের মোহনা আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে ১০০ ফিটে নেমে এসেছে। ডিসিআর এর মাধ্যমে চর বন্দোবস্ত দেওয়ার কারনে এখানে নানা প্রকার স্থাপনা তৈরী হচ্ছে। ফলে নদীর প্রশ¯তÍ া আস্তে আস্তে কমে আসছে। এ নদীকে বাচঁ াতে হলে- নদীর মোহনা খনন করে নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে হবে ও ডিসিআর বন্ধ রাখতে হবে। তবেই এ নদী রক্ষা পাবে। অনেকেই মনে করেন শিববাড়ীয়া নদীর এখন মূল সমস্যা হল নাব্যতা সংকট। পলি জমে এই নদীটি নাব্যতা সংকটে পড়েছে। তাই পরিকল্পিত খননের মাধ্যমে এ পোতাশ্রয়কে রক্ষা করার কোন বিকল্প নেই। নদীটির ফোরশোর এলাকা চিহ্নিত করে সীমানা পিলার দেওয়া হলে
কেউ ভবিষ্যতে নদীর জমি দখল করতে পারবে না। নদীটির গভীরতা ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারনে নৌ-যান চলাচলে বিঘড়ব ঘটছে এবং এই নদীর সংযোগ খালগুলো পানির অভাবে অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। যে কারনে নদীটির দু’পারের শত শত হেক্টরের কৃষিজমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এ নদীটি হাজার হাজার জেলেদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নদীটির দু’পাড়ের সাধারন কৃষকদের জীবন-জীবিকাও এই নদীর সাথে সম্পকির্ত । অথচ প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার। তাই বেলা’র মাধ্যমে তারা তাদের সমস্যার কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন’’
শিববাড়ীয়া নদী রক্ষায় ও সচল রাখতে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যাশাসমূহ:
১। নদীর মোহনা খনন করে নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে হবে
২। ডিসিআর বন্ধ রাখতে হবে।
৩। পরিকল্পিত খননের মাধ্যমে পতনমুখ সচল করা
৪। নদীটির ফোরশোর এলাকা চিহ্নিত করে সীমানা পিলার দেওয়া
৫। নদীর সংযোগ খালগুলোর মুখের গেটগুলো অপসারন ও পানির প্রবাহ সচল রাখা
৬। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা
৭। ‘নদী রক্ষায় ও নগরায়নের জন্য মাষ্টার প্লান সহ সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা
৮। মামলা পরবর্তীতে বেলার এ বিষয়ে খেয়াল রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘নদী রক্ষায় ও নগরায়নের জন্য মাষ্টার প্লান সহ সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা
উচিত। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক সেই সরকারের প্রভাবশালীরা দখল দারিত্বে মেতে উঠে। সরকার নির্বিকার
থাকে। সরকারের উচ্ছেদ কার্যμমেও তখন তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে হলে
নদীকে নদীর মত থাকতে দিতে হবে। শিববাড়ীয়া নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে আন্দারমানিক ও চাপলী মোহনা ড্রেজিং
করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার্থে নানা প্রতিকুলতা সত্বেও বেলা এ পর্যন্ত সাহসের সাথে কাজ করে চলেছে। এজন্য
বেলা’কে ধন্যবাদ জানাই। জলাশয় ও জীব বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে গেলে আমরাও একদিন ধ্বংস হয়ে যাব। এ জন্য
নদী-খাল-বিল সহ সকল জলাশয় আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে
হবে’’। অনুষ্ঠানে মোট ২৫ জন অংশগ্রহনকারী উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১০ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ।