আজ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রæয়ারি, ২০২১) বান্দরবানে ম্রো ভূমিতে পাঁচ তারা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী; সেনাবাহিনী প্রধান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পত্র প্রেরণ করেছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। একইসাথে, এ প্রকল্পে সকল প্রকার সম্পৃক্ততা প্রত্যাহার করতে আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল বরাবর পত্র প্রেরণ করেছে তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার বান্দরবান- চিম্বুক-থানচি সড়কের ডান পাশে চিম্বুক পাহাড়ের কোলে ৩০২ নং লুলাইং মৌজা ও ৩৫৫ নং সেপ্রæ মৌজায় কাপ্রæপাড়া, দোলাপাড়া, ইরাপাড়া ও শোং নাম হুংপাড়ায় (যা চন্দ্র পাহাড় নামে পরিচিত) অন্ত:ত ১০ হাজার ম্রো জনগোষ্ঠীর বসবাস। উক্ত জনপদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ডিভিশন ও ৬৯তম ব্রিগেড বিতর্কিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সিকদার গ্রæপের অঙ্গ সংগঠন আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেডের সাথে যৌথ উদ্যোগে একটি সুবিস্তৃত পাঁচতারা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোক্তারা এটিকে “ম্যারিয়ট হোটেলস্ এ্যান্ড রিসোর্টস্” (হোটেল ও বিনোদন পার্ক) বলে বিজ্ঞাপন বোর্ডে প্রচার করলেও ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর স্বাক্ষরিত ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ এর চিঠিতে হোটেল ও রিসোর্ট প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি চূড়ান্ত নয় এবং তাদের নাম ও ব্র্যান্ড এর ব্যবহার অনুমোদিত নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে।
নাগরিকদের পাঠানো চিঠিতে ম্রো জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি (ঋৎবব, চৎরড়ৎ ধহফ ওহভড়ৎসবফ ঈড়হংবহঃ-ঋচওঈ) ছাড়া প্রতিবাদকারী ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং সাজানো কিছু অনুষ্ঠান/বক্তব্য/লিখনীর মাধ্যমে হোটেল ও বিনোদন পার্ক স্থাপনে ম্রো জনগোষ্ঠীর সম্মতি আছে বলে প্রচারের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হোটেলের প্রয়োজনে ২০ একর জমি নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যত: বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চতুর্পাশে সীমানা খুঁটি স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। যেখানে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর স্থাপনা সংকুচিত করার কথা সেখানে এমন বিশাল নির্মাণ এই চুক্তির বিধানের স্পষ্ট লংঘন বলে উল্লেখ করেছেন পত্র প্রেরণকারীগণ। হোটেলের স্বার্থে ম্রো জগোষ্ঠীর জীবিকা অর্জনে, তাদের চলাচল ও যাতায়াতেও জোরপূর্বক বাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করা করেছে স্বাক্ষরকারী নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ।
সিকদার গ্রুপের মত নদী দখলদারের তালিকায় থাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে চরম অবমাননাকর আচরণের পরে দেশত্যাগের মত জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে গৌরবোজ্জ্বল এবং জাতির অহংকার ও আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশীদারিত্ব চরম হতাশজনক মর্মে উল্লেখ করেছেন নাগরিক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
স্বাক্ষরকারীগণ প্রথাগত জনগোষ্ঠীর অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়ে এবং বান্দরবানের মতো সংবেদনশীল প্রতিবেশ ব্যবস্থার সুরক্ষার স্বার্থে “ম্যারিয়ট হোটেলস্ এ্যান্ড রিসোর্টস্” নামক প্রকল্প এবং সিকদার গ্রুপের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশিদারিত্ব অবিলম্বে বাতিলের ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য মাননীয় মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাথে সাক্ষাতের অনুরোধও জানিয়েছেন স্বাক্ষরকারীগণ।
পত্রগুলোতে স্বাক্ষর প্রদানকারীগণ- প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর, এমেরিটাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী; খুশি কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী সভাপতি পিপিআরসি; ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র; ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গর্ভনর, বাংলাদেশ ব্যাংক; ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক; গণস্বাক্ষরতা অভিযান; ড. বদিউল আলম মজুমদার, সচিব, সুজন; ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মানিত ফেলো, সিপিডি; ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সম্মানিত ফেলো, সিপিডি; শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ; প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; প্রফেসর এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; ড. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল ওইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়; প্রফেসর ফেরদৌস আজিম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আসিফ নজরুল, প্রফেসর, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. হামিদা হোসেন, নারী অধিকার কর্মী; রেহনূমা আহমেদ, লেখক; মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক প্রফেসর শাহনাজ হুদা, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আমেনা মহসিন, প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রফেসর ড. সি আর আবরার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. ইমরান মতিন, নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স ও ডেভেলপমেন্ট; ড. তাসনিম সিদ্দিকী, প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রামরু; ড. ইমরান রহমান, প্রাক্তন উপাচার্য, ইউল্যাব; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, প্রফেসর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গীতিয়ারা নাসরিন, প্রফেসর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও লেখক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দৃক; মো. নিজামুল হক, চীফ লিগ্যাল এডভাইজর, ব্লাষ্ট, প্রাক্তন বিচারপতি, আপিল বিভাগ, সুপ্রীম কোর্ট; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি; সারা হোসেন, এ্যাডভোকেট, সুপ্রীমকোর্ট; জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী, কোস্ট; নুর খাঁন, সাধারন সম্পাদক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র; অরূপ রাহী, কবি, লেখক ও গায়ক; মাহরুখ মহিউদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনিভাসির্টি প্রেস লি:; তাসাফি হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা, বহ্নিশিখা; সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজ বিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সঞ্জীব দ্রং, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; রিপন বানাই, কর্মসূচি সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; জুয়ামলিয়ান আমলাই, সভাপতি, বান্দরবান চ্যাপ্টার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলন; অজয় এ মৃ, সভাপতি, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ; মুক্তশ্রী চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, স্পার্ক; গৌতম দেওয়ান, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি; লুবনা মরিয়ম, পরিচালক, সাধনা; নায়লা খান, পরিচালক, ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন; ওমর তারেক চৌধুরী, লেখক-অনুবাদক-প্রকাশক; নবনীতা চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী, গায়ক; আনুশেহ আনাদিল, সুরকার, সৃজনশীল পরিচালক, যাত্রা বাংলাদেশ; সাইদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক; মাহমুদ রহমান, আলোক চিত্রী, ম্যাপ-ফটো; মাহবুবা আখতার, উপ-পরিচালক, ব্লাষ্ট; এ্যাডভোকেট মো: তাজুল ইসলাম, উপদেষ্টা, এডভোকেসী এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, ব্লাষ্ট; গোলাম মনোয়ার কামাল, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র; নিনা গোস্বামী, জেষ্ঠ্য উপ-পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র; মো: শাহিনুজ্জামান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, এবং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এ্যাডভোকেট, সুপ্রীমকোর্ট ও প্রধান নির্বাহী, বেলা।