আজ (০৮ নভেম্বর, ২০২১) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর ও সোনারামপুর মৌজায় প্রবাহিত মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল বিবাদীগণের (বিবাদী নং ১, ৫ ও ১৮) অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাটের মাধ্যমে দখল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে ও অবৈধ, অননুমোদিত ও নির্বিচার মাটি ভরাট থেকে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতাকে কেন সংবিধানবিরোধী, বেআইনী, আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত এবং জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত।
সেইসাথে, বিবাদীগণ (বিবাদী নং ১, ৫ ও ১৮) কর্তৃক মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাটের কার্যক্রম ও উক্ত স্থানে এপিএসসিএল কর্তৃক যেকোন স্থাপনা নির্মাণের উপর ৩ (তিন) মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন মহামান্য আদালত। একইসাথে বিবাদীগণকে (বিবাদী নং ৬, ৭ এবং ১০) আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে অবৈধভাবে মেঘনা নদীর অংশবিশেষ ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল ভরাটের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট জমাদানের নির্দেশও প্রদান করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট।
বিচারপতি জনাব মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি জনাব মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ৮৫৪০/২০২১) প্রাথমিক শুনানী অন্তে এ রুল জারি করেন।
উল্লেখ্য, সরকারি মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) কর্তৃপক্ষ সোহাগপুর ও বাহাদুরপুর মৌজায় মেঘনা নদীর পাড় ও নদীর ভেতরের শত শত একর জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করছে মর্মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এপিএসসিএল তাদের নিজস্ব জায়গা ভরাট করছে মর্মে দাবি করলেও বিআইডবিøউটিএ এবং পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জায়গাটি পরিদর্শন করে ভরাট করা জায়গা নদীর বলেই তাঁদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বালু ভরাট অংশের পশ্চিম-উত্তর পাশ দিয়ে সোহাগপুর গ্রামের দিকে বড় খাল গেছে। স¤প্রতি বেলা প্রতিনিধিদের সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতীয়মান হয়, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এপিএসসিএলের রেস্টহাউস। এর পেছনে সীমানাপ্রাচীর থেকে নদীর দিকে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট প্রস্থের ও দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের নতুন করে দেয়াল নির্মাণ করে বালু ভরাট করা হয়েছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কৌশলে কেন্দ্রের রেস্টহাউসের পেছনে নিজেদের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে মেঘনা নদীর পাড়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করেছে। মেঘনা নদী থেকেই বালু উত্তোলন করে নতুন সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ফেলে পাড় ভরাট করে জায়গা দখলে নিয়েছে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ। এতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন, মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চরসোনারামপুর গ্রামটি নদীতে বিলীন, গ্রামটিতে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার মৎস্যজীবী পরিবার তাঁদের বাসস্থান, আশুগঞ্জ এলাকার একমাত্র শ্মশান এবং চরে অবস্থিত ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে মর্মে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এমতাবস্থায় মেঘনা নদী ও নদীর সাথে সংযুক্ত সোনারামপুর খাল নদী রক্ষার নিমিত্তে বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আশরাফ আলী।
।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ৩। সচিব, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ৪। সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ৫। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ৬। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ৭। চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ৮। মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ৯। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ১০।জেলা প্রশাসক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১১। পুলিশ সুপার, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১২। উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কার্যালয়, ১৩। বন্দর কর্মকর্তা ও উপপরিচালক, আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দও, বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, বিআইডবিøউটিএ, ১৪। নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১৫। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১৬ । সহকারি কমিশনার (ভূমি), আশুগঞ্জ উপজেলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১৭। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আশুগঞ্জ পুলিশ স্টেশন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১৮। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিঃ।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
সাঈদ আহমেদ কবীর
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১২০৮০৮১
তারিখঃ ০৮ নভেম্বর, ২০২১