‘‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা এবং সমাধানে করনীয় ’’ শীর্ষক
আলোচনা সভা (এফজিডি)
স্থান: হোসনাবাদ, কাউনিয়া,বরিশাল।
তারিখ: ২৭ অক্টোবর ২০১৯
প্রতিবেদন তৈরী: ৩১ অক্টোবর ২০১৯
‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত বরিশালের সার্বিক পরিবেশ এখন আর আগের মতো নেই। বরিশালের বর্তমান মেয়র মহোদয় বরিশালকে দ্বিতীয় সিংগাপুর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অথচ বরিশালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন পরিকল্পিত ¯া’ পনা নেই। নেই কোন প্রস্তুতিও। দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল শহরের সকল গৃহ¯ল’ ী ও মেডিকেল বর্জ্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন কাউনিয়ার হোসনাবাদ আবাসিক এলাকায় উন্মুক্ত ¯া’ নে ফেলা হচ্ছে। বিষাক্ত হয়ে উঠেছে এলাকার সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ। চতুর্দিকের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা ঘর-বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি নিজ¯ ^ পাকা স্থাপনা ছেড়ে অনেক বাড়ীর মালিক শহরের অন্যত্র গিয়ে ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। শুধু কি তাই, শুকনো মৌসুমে উন্মুক্ত ¯া’ নে যখন ময়লা-আবর্জনা আগুনে পোড়ানো হয় তখন চারিদিকে মানুষ জনের চলাফেরা এমনকি শা¦ স-প্রশ্বাস নিতেও অনেক কষ্ট হয়। যে কারনে এই নগরীর মানুষরা উপহাস করে ময়লা আবজর্ন ার এ ভাগারকে তীলোত্তমা নগরীর বিষফোঁড়া উপাধি দিয়েছেন। স্থানীয়রা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে এ ব্যাপারে আকুতি- মিনতি জানালেও প্রশাসন নির্বিকার। কখনো কখনো সভা সেমিনারে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও ময়লার ভাগারটি শহর হতে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিলেও আজ পর্যন্ত কার্যকরী কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। যার পরনাই পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ এখন হতাশ। প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারনে তারা বেলা’র কাছে এ সমস্যা সমাধানে আইনী সহায়তা চাইলে বেলা বরিশাল অফিস ভুক্তভোগীদের কথা শুনতে ও বাস্তব পরিস্থিতি জানতেগত ২৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে বরিশালের কাউনিয়া এলাকার হোসনাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে ‘‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা এবং সমাধানে করনীয় ’’ শীর্ষক আলোচনা সভা (এফজিডি) এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলা বরিশাল অফিসের সমন্বয়কারী জনাব লিংকন বায়েন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে ময়লাখোলার দুর্দশা লাঘবে জনস্বার্থে বেলা’র করনীয়, সংশিষ্ট বিধিবিধান এবং এ অবস্থা নিরসনে নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন। এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব মাসুদুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এলাকার নারী-পুরুষ মিলে মোট ২৬ জন অংশগ্রহনকারী তাদের দুর্দশার ও ভোগাšিরÍ চিত্র তুলে ধরেন। বেলা’র কাছে তাদের প্রত্যাশা: ‘‘আইনী প্রμিয়ার মাধ্যমে বেলা জন¯া^ র্থে লোকালয় থেকে নিরাপদ দূরত্বে ময়লার ভাগারটি স্থানাšরÍ করবে এবং এলাকার সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে’’।
উন্মুক্ত আলোচনায় মোঃ শাহজালাল বলেন, ‘‘আমরা এখানের স্থানীয় বাসিন্দা। বাড়ি-ঘর, জমি-জমা সবই এখানে।যখন প্র ম এখানে ময়লাখোলা তৈরী করা হয় তখনই আমরা স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়েছি। সিটি কর্পোরেশন নানা কৌশল অবলম্বন করে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। কিš ‘ কর্তৃপক্ষ কথা রাখেনি। এখনো সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র চর এলাকায় নিরাপদ দূরত্বে আধুনিক ময়লাখোলা নির্মানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখছি না। যারপরনাই এখন আমরা হতাশ। তাই পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র কাছে আমাদের প্রত্যাশা বেলা আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশগত সুরক্ষা দিবে।
এলাকার গুরুজন মোঃ দলিল উদ্দিন খান (৭০) বলেন, ‘‘এই হোসনাবাদ এলাকায় আমার জন্ম। সবদিক দিয়ে আমরা এলাকাবাসী সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলাম। কিš ‘ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এক হটকারী সিদ্ধাšে Í আমাদের ঘুম হারাম হয়েছে। ময়লা খোলার দুর্গন্ধে ২৪ ঘন্টা বিভীষিকাময় সময় পার করতে হচ্ছে। অনেকেই বাড়ীঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র গিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছেন। আমরা যারা নিরুপায় তারা দুর্গন্ধকে সঙ্গী করে বসবাস করছি। এখন আমরা এ অবস্থা হতে মুক্তি চাই। শুনেছি বেলা জনস্বার্থে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে। তাই বেলা’র কাছে এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে আকুল আবেদন জানাই’’। হোসনাবাদ এলাকার গৃহিনী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘‘এক সময় আমরা এ এলাকায় বুক ভরে নিঃস্বাস নিতাম। সুন্দর পরিবেশ ব্যবস্থা ছিল এখানে। এখন নিঃম্বাস নিতে কষ্ট হয়। বাচ্চারা বাসায় বসেও ঠিকমতো নিঃস্বাস নিতে পারে না। নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগছে। লেখাপড়ার বিঘড়ব ঘটছে। দেখার কেউ নেই। কত জায়গায় এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, সবাই আশ্বাস দেয় কিন্তু আজো কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা সত্যিকার অর্থে এখন হতাশ হয়ে পড়েছি। আপনারা যদি পারেন আমাদের জন্য কিছু একটা বিহিত ব্যবস্থা করেন’’। মমতাজ বেগম বলেন, ‘‘এখানকার সার্বিক পরিবেশ এমনই যে, ছেলেমেয়েরা খেলাধুলার জন্য বাইরে বের হতে পারে না। সার্বক্ষনিক স্কুল ও বাসাতেই কাটে। এ যন্ত্রনার কথা কাউকে বুঝিয়ে বলা যাবে না। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কর্তৃপক্ষ কিভাবে এই ময়লাখোলা বানিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাসায় থাকলেও আমাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। বিশেষ করে শুকনো সিজনে দুর্গন্ধে এলাকায় টিকে থাকা দায়। আমাদের একটাই কথা যত দ্রæত সম্ভব নিরাপদ দূরত্বে এটি স্থানাšরÍ করা হোক’’।
ময়লাখোলার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে হোসনাবাদ এলাকাবাসী বেলার কাছে যে দাবী গুলো তুলে ধরেছেন তা হলো-
১। ডাম্পিং এরিয়া বা ময়লাখোলাটি চরাঞ্চলে যেখানে বসতি নেই এমন নিরাপদ দূরত্বে স্থানাšরÍ ।
২। ময়লা আবজর্ন া যাতে খালের পানিতে ও লোকালয়ের যেতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ
৩। এলাকায় যাতে ধোয়া ও গন্ধ ছড়াতে না পারে তার পদক্ষেপ গ্রহণ করা
৪। পরিবহনের সময় যত্রতত্র যাতে ময়লা না পরতে পারে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা
৫। ময়লাখোলায় ময়লা পোড়ানোর জন্য উনড়বত প্রযুক্তির ব্যবহার।
৬। মেডিকেল বর্জ্য আলাদা ভাবে ব্যবস্থাপনা করা।
৭। গণস্বাক্ষর নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যাটি তুলে ধরা।
৮। সৃষ্ট সমস্যায় এলাকার স্বাস্থ্যঝুকি নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সমস্যাটি তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, ‘‘সাবেক মেয়র জনাব আহসান হাবিব কামাল বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ বরিশালকে দ্বিতীয় সিংগাপুর করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বরিশালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেখলে আমাদের মনের কষ্ট বহুগুন বেড়ে যায়। এটাকে কেউ কেউ বরিশাল নগরীর বিষফোঁড়াও বলে থাকেন। ময়লাখোলার কারনে আমরা এতটাই অতিষ্ট যে, ঘরবাড়ীতে তালা লাগিয়ে অনেকে অন্যত্র চলেগেছে এবং অনেকে জমিজমা বিμি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপনড়ব। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। এ লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলনের কোন বিকল্প দেখিনা। আমরা বিশ্বাস করি আগামী দিনেও পরিবেশ রক্ষার এ আন্দোলনে ‘‘বেলা’’ আমাদের পাশে থাকবে’’।