আজ (০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের বগুড়া আলেকান্দা মৌজায় অবস্থিত নার্সিং পুকুর ভরাট কার্যক্রম থেকে বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক, বরিশালের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), বরিশাল এর অধ্যক্ষকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
নিষেধাজ্ঞার এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত পুকুরটি বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক, বরিশারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), বরিশাল এর অধ্যক্ষ কর্তৃক ভরাট কার্যক্রম থেকে রক্ষায়, পুনরুদ্ধারে ও সংরক্ষণে বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হওয়ায় তা কেনো অবৈধ, আইনী কর্তৃত্ববিহীন এবং জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। একইসাথে বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বরিশালের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), বরিশাল এর অধ্যক্ষ কর্তৃক অননুমোদিত ভরাট কার্যক্রম থেকে পুকুরটি রক্ষায়, ভরাটকৃত অংশকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং পুকুরটিকে জনসাধারণের জন্য সংরক্ষণে উল্লেখিত বিবাদগণের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেনো প্রদান করা হবেনা তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ১১৭৬/২০২৪) প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন বগুড়া আলেকান্দা মৌজায় এস এ ২৪৫৪ নং দাগে ৩২.২ শতাংশ আয়তনবিশিষ্ট একটি পুকুর রয়েছে যা “নার্সিং কোয়াটার” পুকুর নামে পরিচিত। শতাধিক বছরের পুরাতন এ পুকুর গার্হস্থ্য কাজের জন্য সাধারণের ব্যবহার্য হিসেবে রেকর্ডীয়। নগরীর পরিবেশ রক্ষায় ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুরটির ভূমিকা অপরিসীম। অগ্নিকা- মোকাবেলায় এ পুকুরের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। সম্প্রতি রাতের আধাঁরে জনগুরুত্বপূর্ণ এ পুকুরের উত্তর পাশে হাসপাতাল রোড সংলগ্ন দেয়াল ভেঙে শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ পুকুরের প্রায় অর্ধেক ভরাট করা হয়েছে। বরিশাল নগরীর পরিবেশবাদীগণ উল্লেখিত পুকুর ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বরিশাল বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক পুকুরটি পরিদর্শনপূর্বক পুকুর ভরাট বন্ধ করতে ও ভরাটকৃত অংশের বালু অপসারণের জন্য বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং বরিশাল জেলার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানায়। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পুকুর ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি যাই হোক না কেনো, অপরিহার্য জাতীয় প্রয়োজন ছাড়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া তা ভরাট করা যাবে না। পুকুর ভরাট ও শ্রেণি পরিবর্তনের এহেন কার্যক্রম দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয় বাসিন্দাগণ আইনি প্রতিকার পেতে বেলা’র সহযোগিতা কামনা করে আবেদন করলে পুকুরটি রক্ষায় বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; বরিশালের জেলা প্রশাসক; বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার; বরিশাল বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার; বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ; বরিশারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বরিশালের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), বরিশালের অধ্যক্ষ।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল- ০১৮৩৩০২৬২৬২