পটিয়ার চারটি গ্রামকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্তনিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কে হাইকোর্টের নির্দেশ
পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্তনিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কে হাইকোর্টের নির্দেশ
আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার, হাবিলা সদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া এবং হাবিলা সদ্বীপ গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপিত ৩৫০টি টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়লে গ্রামগুলোর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়ে। যে আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে গ্রাম গুলোতে এ পানি শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে ছয়টিরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই এবং বেশির ভাগই বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান ছাড়া পরিচালিত হচ্ছিল। এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান সৃষ্ট দূষণে পার্শ্ববর্তী বোয়ালখালী, গরু লতা এবং আলম ডাঙা খালের পানি দূষিত হয়ে পড়লে গ্রামবাসী সুপেয় পানির পাশাপাশি চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানিরও তীব্র সংকটে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলে ও প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অমান্য করে এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে জরিমানা প্রদাননাকরে ও তাদেরকার্যক্রম অব্যাহতরাখে।
এহেনপরিস্থিতিতেবাংলাদেশ পরিবেশআইনবিদ সমিতি (বেলা) আটটিশিল্পপ্রতিষ্ঠানের (১। বনফুল এন্ড কোঃ (ফুড প্রোডাক্টস) ২। বনফুল এন্ড কোঃ (মিনারেলওয়াটার) ৩। আম্বিয়া নীটিং এন্ড ডাইংলিঃ ৪। আম্বিয়া পাল্প এন্ড পেপার মিলসলিঃ ৫। মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লিঃ ৬। হাক্কানীপাল্প এন্ড পেপার মিলসলিঃ ৭। আনোয়ারা পেপার মিলসলিঃ ৮। শাহ্আমানতনীটিং এন্ড ডাইংলিঃ) অনুমোদনবিহীন ও অপরিকল্পিতভাবেগভীরনলকূপ স্থাপন ও ব্যাপকহারেভূগর্ভস্থ পানিউত্তোলন, কারখানারবর্জ্যপার্শ্ববর্তীখাল ও কৃষিজমিতেনিক্ষেপ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক পরিবেশেরজন্য বিপদজনক ও দূষণযুক্ত কার্যক্রম পরিচালনারবিরুদ্ধে প্রতিকারপ্রার্থনাকরেমহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে(রিটপিটিশননং ৪৪০/১৫)মামলাদায়েরকরে।
মামলারশুনানীতেপরিবেশঅধিদপ্তরশিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দূষণবিষয়েবিস্তারিতপ্রতিবেদনপ্রদানকরে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলঅধিদপ্তরএবংবাংলাদেশ পানিউন্নয়ন বোর্ড যে সকলপ্রতিবেদনআদালতে দাখিলকরেতাতে স্পষ্টহয় যে গ্রামগুলোতেএখনআরহস্তচালিতপাম্পবাতারাটিউবওয়েলেরমাধ্যমে পানিউত্তোলন সম্ভব নয়। ফলেসরকারমাটির ১৫০ মিটারনীচ থেকে পানিউত্তোলনেসক্ষমএমনপাম্পবসিয়েএলাকাবাসীরপানিচাহিদা মেটাতে উদ্যোগনিচ্ছে। সরকারেরএমন উদ্যোগক্ষয়িষ্ণুভূগর্ভস্থ পানি স্তরেরউপরআরোচাপসৃষ্টিকরবেবলেসরকারেরএমন উদ্যোগেরবিরোধিতাকরেআদালতে বক্তব্য রাখেবেলা’রআইনজীবীরা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোপাশ্ববর্তীখালেরপানিনিয়েকার্যক্রম চালাবারঅনুমতিচাইলেখালেরপানিইতোমধ্যে দূষিতহয়েপড়েছেএবংতাপরিশোধনকরেগ্রামেরমানুষেরপানিরচাহিদাপ্রথমে পূরণকরতেহবে, এমন যুক্তিতে বেলা’রপক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপনকরাহয়। সংশ্লিষ্টসকলপক্ষের দীর্ঘশুনানী শেষেমহামান্য হাইকোর্ট ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ইংতারিখেপানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কৃষিমন্ত্রণালয়, স্থানীয়সরকারমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পানিউন্নয় বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলঅধিদপ্তরএবং জেলাপ্রশাসক ও পটিয়াউপজেলা চেয়ারম্যানকেগ্রামবাসীকেঅব্যাহতভাবেসুপেয়পানিসরবরাহেরনির্দেশ প্রদানকরেন। আদালতপানিআইন, ২০১৩ধারা (১৭)-এরঅধীনেচরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়াএবংহাবিলাসদ্বীপগ্রামগুলোকেপানিসংকটাপন্নএলাকা ঘোষণারবিষয়েআগামীতিনমাসেরমধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণেরনির্দেশ দেন। একইসাথে আদালতবিবাদীশিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানিউত্তোলন থেকে বিরত থাকারওনির্দেশনাপ্রদানকরেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ুপরিবর্তনমন্ত্রণালয়, পরিবেশঅধিদপ্তরএবংচট্টগ্রামজেলাপ্রশাসককেআদালতেআটিটিশিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক করা দূষণেরপরিমাণযাচাইকরেতাদেরকাছ থেকে ক্ষতিপূরণআদায়েরনির্দেশ দেন।
আদালতেরনির্দেশনাঅনুযায়ীভবিষ্যতে এই চারটিগ্রামেবিকল্পপানিরব্যবস্থা নাকরে ভূ-গর্ভস্থ পানিরউপরনির্ভরকরে কোন‘লালবাকমলা-খ’ শ্রেণিরশিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিতহতেপারবেনা। পটিয়াউপজেলায়পরিবেশগতছাড়পত্রছাড়াএবংকার্যকরীবর্জ্য শোধনাগারপ্ল্যানব্যতীত কোনশিল্পপ্রতিষ্ঠান যেনপরিচালিতহতেনাপারেতানিশ্চিতকরতেপরিবেশঅধিদপ্তর কে আদালতনির্দেশ দিয়েছেন। আদালতেরনির্দেশ প্রতিপালনবিষয়েপরিবেশঅধিদপ্তরেরমহাপরিচালককে মেমোপ্রস্তুত করেতাআদালতে দাখিলেরনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, পানিআইনেরঅধীনে দেশে কোনএলাকাকেপানিসংকটাপন্নএলাকা দাবিজানিয়েএটিইপ্রথমআইনীকার্যক্রম যাপ্রাকৃতিকসম্পদে জনঅধিকারনিশ্চিতকরণেরমাধ্যমে পরিবেশগতন্যায্যতাপ্রতিষ্ঠায় বেলা’র অঙ্গীকারেরই প্রতিফলনঘটায়।