আজ (২৫ ফেব্রæয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলাস্থ ৮ নং রংছাতি ইউনিয়নের সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান “ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি” নামক বালুমহালের ইজারা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের উপর ১ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করেছেন। একইসাথে আদালত আগামী ১ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) কর্তৃক হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সম্পন্ন করে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) কর্তৃক ২০২২ সালে দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলায় (নং ৪৫৬৩/২০২২) মহাদেও নদীতে বিদ্যমান বালুমহালে নতুন করে ইজারা দরপত্র সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বেলা কর্তৃক দায়েরকৃত একটি সম্পূরক আবেদনের শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলাস্থ ৮ নং রংছাতি ইউনিয়নের সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান “ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি” নামক বালুমহালের ইজারা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে গত ১০ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ৪৫৬৩/২০২২) দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে ১৩ জুন, ২০২২ তারিখে মহামান্য আদালত মহাদেও নদী, নদী সংলগ্ন ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসত বাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘণ বিধায় তা কেন আইনবহির্ভুত, আইনী কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। একইসাথে বালু উত্তোলনের ফলে মহাদেও নদী, নদীর প্রতিবেশগত ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সম্পদের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৭ অনুযায়ী নিরুপণের ও ইজারা গ্রহীতাসহ দোষী ব্যক্তির নিকট হতে আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না এবং কেন মহাদেও নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও এর যথাযথ ব্যবস্থাপনার নির্দেশ প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে মহামান্য আদালত চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, নেত্রকোনাকে মহাদেও নদীর অবস্থা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রস্তুত ও ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নকল্পে বিগত ১০ নভেম্বর, ২০২২ এ ৩১.৪৫.৭২০০.০০৮.৩৩.২০১.২০-২৪৬৯ স্মারকবাহী পত্রের মাধ্যমে মহাদেও নদীতে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত ইজারা বাতিল করা হয়। সম্প্রতি কোনোরূপ হাইডোগ্রাফিক ও ভূতাত্তি¡ক সার্ভে, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরুপণ না করেই ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে মহাদেও নদীতে বিদ্যমান মামলাভুক্ত “ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি” নামক বালুমহাল ইজারার উদ্দেশ্যে দরপত্র আহবান করা হলে বেলা ইজারা দরপত্রের কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মহামান্য আদালতে আবেদন দাখিল করে। আবেদনের শুনানী শেষে আজ আদালত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান “ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি” নামক বালুমহালের ইজারা দরপত্র সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের উপর ১ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৩। চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; ৪। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৫। মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; ৬। বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ; ৭। জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনা; ৮। পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা; ৯। সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, নেত্রকোনা; ১০। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলমাকান্দা উপজেলা, নেত্রকোনা।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল- ০১৮৩৩০২৬২৬২