আজ (০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যমান সকল পার্ক ও খেলার মাঠের úূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত; অনতিবিলম্বে পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং বিদ্যমান পার্ক ও খেলার মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। মহামান্য আদালত এ নির্দেশসমূহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী-এর উপর জারি করেন। উল্লেখিত তিনটি নির্দেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৬(ছয়) মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।
অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত ঢাকা মহানগরীর সকল পার্ক ও খেলার মাঠ রক্ষায় বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। রুলে হাইকোর্ট জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, পার্ক ও খেলার মাঠ বিরুদ্ধ ব্যবহার, শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা বেআইনী, আইনি কর্তৃত্ববিহীন এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসাথে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না সেবিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। সেইসাথে মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, শ্রেণি পরিবর্তন ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধ এবং বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। মামলার বিবাদীগণকে আগামী চার (৪) সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার (নং ১০৫৩/২০২৪) প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং জনাব বিচারপতি খিজির হায়াত এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধূরী এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
উল্লেখ্য, ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) আয়তন বিশিষ্ট দেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরী ১৬ মিলিয়ন লোকের আবাসভূমি। প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত এ মহানগরী বর্তমানে বিশ্বের বসবাস অযোগ্য নগরীর পরিচয় গ্রহণ করেছে। অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত প্রসারিত মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা অন্যতম। অপরিকল্পিত নগরায়ন গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি। নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুইটি সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় দুই কর্পোরেশনে খেলার মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৫টি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলশ্রুতিতে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭.৮২% তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা উদ্যান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ৬টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার। ফলশ্রুতিতে নাগরিকগণ বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে ও সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। ঢাকা শহরের সকল খেলার মাঠ ও পার্কসমূহ রক্ষায় বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র; , রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার; গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল- ০১৮৩৩০২৬২৬২