বিগত ৩১ মার্চ, ২০১৯ তারিখে দৈনিক “বণিক বার্তা” পত্রিকায় প্রকাশিত “ক্যান্সারের ঝুঁকি, তবুও বাজারে মনসান্টোর রাউন্ডআপ”, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে দৈনিক “নিউ এইজ” পত্রিকায় প্রকাশিত “Hazardous pesticides in wide use in Bangladesh” , ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ এ দৈনিক “প্রথম আলো” পত্রিকায় প্রকাশিত “পাবনায় ৯০% জমির উর্বরতা কমেছে” এবং ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে দৈনিক “সমকাল” পত্রিকায় প্রকাশিত “আমদানি কীটনাশকে ক্ষতিকর ধাতু” শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)সহ মোট ৭টি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংস্থা কীটনাশক নিয়ন্ত্রণে এবং গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ রাউন্ডআপ সহ অন্যান্য কীটনাশকের আমদানি, বিক্রয়, বিপণন, ব্যবহার ইত্যাদি রোধে নির্দেনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থমূল মামলা (নং-১৪৬১৪/২০১৯) দায়ের করে। ক্যান্সার গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আএআরসির (International Agency for Research on Cancer) ২০১৫-র একটি প্রকাশনাতে গ্লাইফোসেট উপাদানটিকে “মানুষের জন্য সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী” আখ্যা দেয়া হলে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ কৃষি পণ্য বিপণনকারী মনসান্টোর (বর্তামানে জার্মান মালিকানাধীন বায়ার কর্তৃক ক্রয়কৃত) গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ রাউন্ডআপ-এর ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে ১৩,৪০০টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে ৩টি মামলায় আগস্ট, ২০১৮, ১৫ জুলাই ২০১৯ এবং ২৫ জুলাই, ২০১৯-এ সানফ্রানসিসকো ও ক্যালিফোর্নিয়ার ৩টি আদালত গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ রাউন্ডআপ ব্যবহারে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন। মনসান্টো কোম্পানি গ্লাইফোসেট ক্যান্সার সৃষ্টি করেনা মর্মে অবস্থান নিলেও মার্কিন আদালতগুলো আইএআরসি’র প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার “গ্লাইফোসেট নিরাপদ সংস্থার” দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে আইএআরসি’র প্রতিবেদনের উপর ভিত্তিকরে ভারতের পাঞ্জাব ও কেরালা, বাহরাইন, অস্ট্রিয়া, জার্মানী, ডেনমার্ক ও ফ্রান্সসহ বেশকিছু দেশ গ্লাইফোসেট নিষিদ্ধ অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্লাইফোসেট নিষিদ্ধ করতে এবং নিরাপদ বিকল্প প্রবর্তনে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উন্নত বিশ্ব গ্লাইফোসেট থেকে সরে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে অন্তঃত ৭৯ ধরনের প্রচলিত কীটনাশকে গ্লাইফোসেটের উপস্থিতি রয়েছে। মূলত ইক্ষু এবং চাবাগানে গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করা হয় দাবি করা হলেও বেলা’র মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় এটা স্পষ্ট হয় যে, ইক্ষু এবং চা চাষ হয়না দেশের এমন অঞ্চলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ রাউন্ডআপ ও অন্যান্য কীটনাশক বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে।
কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এবং রাউন্ডআপ সহ গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ অন্যান্য কীটনাশকের ব্যবহাররোধে ব্যবস্থা দাবি করে প্রেরিত রীট আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লিগ্যাল নোটিশের উত্তরে সরকারের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং মনসান্টোর মতই “গ্লাইফোসেট ক্যান্সারের সৃষ্টি করে না” দাবি করলেও PESTICIDE TECHNICAL ADVISOTY COMMITTEE (PATC) কমিটির ০৯ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখের ৭৩তম সভা এবং ১৪ মার্চ ২০১৯ তারিখের ৭৭তম সভার বরাত দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে গ্লাইফোসেটের বিকল্প প্রডাক্ট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায়। আদালত বেলা’সহ ৭টি সংগঠন এবং সরকার পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আজ (৫ জানুয়ারি, ২০২০) জনাব বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও জনাব বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ সরকারকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে কেন মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর ক্ষতি সৃষ্টিকারী কীটনাশক মনিটর করতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে নির্দেশ দেয়া হবেনা এবং কেন গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ কীটনাশকের লাইসেন্স প্রদান এবং তার নবায়ন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা সে মর্মে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আদালত গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ সকল কীটনাশকের ক্ষতিকরক প্রভাবের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং গ্লাইফোসেট সমৃদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার থেকে সরে আসতে ৯০ দিনের মধ্যে কর্মপরিকল্পণা প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী এটর্নী জেনারেল তৌফিক সাজোয়ার।
মামলার বিবাদীগণ – সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; খাদ্য মন্ত্রণালয়;নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; পরিবেশ অধিদপ্তর; জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর; বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউিট;পরিচালক, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউিট; উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং; মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউিট; রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন (বিসিপিএ)।
মামলারবাদীগণ- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা); উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষণা (উবিনীগ);এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো); পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা); বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা); শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম (শিসউক) ও বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক)।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন:
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
এ্যাডভোকেট, সুপ্রীমকোর্ট
ও
প্রধান নির্বাহী, বেলা।
মোবাইল: ০১৭১১৫২৬০৬৬
তারিখঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২০