খসড়া‘ নির্মল বায়ু আইন- ২০১৯’বিষয়ক সংলাপ
বায়ু আইন- ২০১৯’বিষয়ক সংলাপ
বিগত বছর গুলোতে রাজধানী ঢাকা বায়ু দূষণে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে যা শুষ্ক মৌসুমে পরিস্থিতিকে আরো বেশিঅসহনীয়করেতুলছে। এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বায়ু দূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণকল্পে বাংলাদেশে কোন উপযুক্ত ও সময়োপযোগী আইন না থাকায় সরকার একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’কে একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য ‘নির্মল বায়ু আইন’খসড়া করার প্রাথমিক দায়িত্ব প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ খসড়া রচনা করে প্রণীত খসড়া আইনটির উপর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য বিগত ২৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে পার্লামেন্ট মেম্বারস্ ক্লাব, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্স-এ ‘নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ বিষয়ক সংলাপ’-এর আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী, সভাপতি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জনাব মো. জাফর আলম, এমপি (ময়মনসিংহ-৩), জনাব মো. রেজাউল করিম বাবলু, এমপি (বগুড়া-৭) এবং বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, এমপি (মহিলা আসন- ৩৪০)। সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. এ. কে. এম. রফিক আহম্মদ, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জনাব আলমগীর মুহম্মদ মনসুরউল আলম, অতিরিক্ত সচিব, (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘নির্মলবায়ুআইন ২০১৯’-এর খসড়ার উপর সাধারণ জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য আইনটি তাদের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করেছে।
এই আইনের প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতামূলক (ঢ়ৎবপধঁঃরড়হধৎু), টেকসই উন্নয়ন (ংঁংঃধরহধনষব ফবাবষড়ঢ়সবহঃ) এবং দূষণকারী কর্তৃক ব্যয়ভার বহন (ঢ়ড়ষষঁঃবৎ ঢ়ধুং) সংক্রান্ত নীতিসমূহ অনুসরণ করার পাশাপাশি বায়ু দূষণ সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা, শিক্ষা ও প্রচারণা এবং বায়ুমান উন্নয়ন তহবিল গঠণের বিষয় আইনটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আইনটির ভাষা প্রাঞ্জল ও সুস্পষ্টকরণপূর্বকএকটি কার্যকরী অর্গানোগ্রাম দাড় করানোর উপরও আইনটিতে জোরারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশিআইনটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবেনিরূপণ ও বন্টন, জনমত গ্রহণের জন্য একটি কার্যকরী কাঠামো প্রণয়ন ও বায়ু দূষণের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দূষণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে চিহ্নিত করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।তাছাড়া, এই আইনে মামলার চাইতে দূষণের জন্য জরিমানা আদায় এবং দূষণ কর সহজে আরোপ ও আদায়ের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
তাছাড়া, এই আইন প্রনয়ণের সময় আরো যে সকল বিষয়াবলির উপর বিশেষভাবে নজর রাখা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তার মধ্যে প্রধানগুলো হলো- তাৎক্ষণিকভাবে বায়ুমান যাচাই ও এ সম্পর্কিত তথ্য সাধারণ জনগণকে জানানোর সক্ষমতা অর্জন করা; পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আদায়কৃত জরিমানা শুধুমাত্র পরিবেশ সুরক্ষার কাজে ব্যবহারের বিধান সংযুক্ত করা, বায়ু দূষণ বিষয়ক অভিযোগ সাধারণ জনগণ কোথায়, কিভাবে, কার কাছে উত্থাপন করে প্রতিকার পেতে পারে তা আইনে সুস্পষ্ট করণ, ট্রান্স বাউন্ডারি বিষয়াবলি – ট্রান্স বাউন্ডারি ইফেক্ট তথা যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী অঞ্চলে যে বায়ু দূষণ হয় সে অংশে ভারতের যে দায় রয়েছে তা আইনে অন্তর্ভূক্ত করা, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকবল বৃদ্ধি করা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিধি/প্রজ্ঞাপন এর উপর নির্ভরশীলতা এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমার অনুল্লেখ, আইনটি পরিবেশ আদালতের এখতিয়ারকে নেতিবাচকভাবে যাতে প্রভাবিত না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখা, আইনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও গণশুনানী গুলোকে প্রশাসনিক নিয়ম রক্ষার চর্চার বাইরে সমস্যা সমাধানে কার্যকর রূপ দেয়ার উপর বিশেষজ্ঞরা জোরারোপ করেন।
আইনটির খসড়া রচনা, তার ওপর বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও তার ভিত্তিতে আইনটি চূড়ান্তরূপ দানে বেলা‘র ভূমিকা প্রতিষ্ঠানটির একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা বলে আমরা মনে করি কেননা, এর মাধ্যমে নির্মল পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রতিষ্ঠানটি যে অঙ্গীকার করেছে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে বলে আমরা মনে করি।