‘‘কীর্তনখোলা নদীর দখল-দূষণ-ভাঙ্গন ও অবৈধ বালু উত্তোলন’’ শীর্ষক
উপকারভোগী সমন্বয় সভা
স্থান: রিভার ভিউ রেঁস্তোরা মিলনায়তন, বরিশাল।
তারিখ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯
প্রতিবেদন তৈরী: ১৪ অক্টোবর ২০১৯
১৩ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বরিশালের আয়োজনে বরিশালের ‘‘কীর্তনখোলা নদীর দখল-দূষণ-ভাঙ্গন ও অবৈধ বালু উত্তোলন’’ শীর্ষক উপকারভোগী সমন্বয় সভা রিভার ভিউ রেঁস্তোরা মিলনায়তন, বরিশালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশালের চরকাউয়া ইউনিয়নের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ লাল মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে বেলা বরিশাল অফিসের সমন্বয়কারী জনাব লিংকন বায়েন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘সমাজের একশ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহালের দখলদারিত্ব ও পরিবেশ পরিপন্থী কমর্ক ান্ডের কারনে ধান-নদী-খাল বেষ্টিত বরিশাল অঞ্চলের পরিবেশ আজ হুমকীর সন্মুখীন। দীর্ঘদিন ধরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী নদী কীর্তনখোলা হতে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারনে নদী ভাঙ্গন আগ্রাসী রূপ ধারন করেছিল যে কারনে বেলা বালুমহাল বন্ধে উচ্চ আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও দূষণ ও দখলদারিত্ব বেড়েই চলেছে। মামলা পরবর্তী সময়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে, তৃনমূল পর্যায়ের মানুষের মতামত ও এ অবস্থায় বেলা’র করনীয় বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহনের লক্ষ্যে মূলতঃ এ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে যে বালু উত্তোলন চলমান ছিল তা বেলার আইনগত পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান হলেও অন্যান্য কারনে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় আমরা নিঃ¯ ^ হতে চলেছি। বেলা’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমরা নদীপাড়ের উদ্বাস্ত মানুষেরা দাবী জানাই যাতে করে সরকারী বেসরকারী পর্যায়ের মাধ্যমে ভাঙ্গন প্রμিয়া ঠেকাতে টেকসই বেড়ী বাঁধ প্রকল্প বা¯বÍ ায়ন করা হয়। অন্যদিকে বরিশাল শহর সংলগড়ব
চরকাউয়া ইউনিয়েনের অšগÍর্ ত নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়া চরবদনা মৌাজায় জেগে ওঠা জমি যাতে আমরা ফিরে পাই তার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করলেও আমরা উপকৃত হব। নদীর সমস্যা তুলে ধরে তারা আরও বলেন নদীতে পলি জমে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় একদিকে যেমন নৌযান চলাচলে বিঘড়ব ঘটছে অন্যদিকে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করায় নদীর দুইপার ভাঙ্গনের সৃষ্টি করছে। সেইসাথে তারা আরও বলেন, যারা ক্ষমতাবান তারাই আইনের তোয়াক্কা
না করে নদীকে দখল ও দূষণ করে চলেছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহŸান জানিয়ে তারা বলেন, ‘‘বরিশালের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতা গড়ে উঠেছে এই কীর্তনখোলাকে কেন্দ্র করে। এই নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। একে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের নিতে হবে।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে কীর্তনখোলা নদীর সমস্যার পাশাপাশি কিছু পরামর্শও তুলে ধরেছেন যা নি¤ড়বরূপ:
১। কীর্তনখোলা নদীর ফোরসোর এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন,
২। পরিকল্পিত ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর সাথে শাখানদী ও খালের উৎসমুখ ও পতনমুখসমূহ সচল করা,
৩। নদীতে কোন অবস্থাতে শিল্প কারখানার রাসায়নিক না ফেলা, নদী খাল দখল-দূষণ রোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অভিযুক্তদের নিকট হতে ক্ষতিপুরন আদায়,
৪। নদী খাল সুরক্ষায় প্রতিমাসে ন্যুনতম একবার মোবাইল কোট পরিচালনা করা,
৫। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদীর অভিভাবক ঘোষণার কার্যকারিতায় নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা ও নদীর গতিপথ, নাব্যতা ও পানিপ্রবাহ সচল রাখতে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা। অনুষ্ঠানের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ লাল মিয়া বলেন, ‘‘বরিশালের কৃষি, মৎস্য, নৌ-যোগাযোগ এবং পরিবেশপ্রতিে
বশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে দখল দূষনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এতটা বছর আমরা কীর্তনখোলা রক্ষায় মানব বন্ধন, সভা-সমাবেশসহ নানা কমর্ক ান্ড চালিয়ে আসছি। প্রশাসনকে এ ঐতিহ্যবাহী নদী রক্ষায় স্মারক লিপিও দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমাদের বসে থাকলে চলবে না। বেলা’র আইনী সহায়তার কারনে বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এজন্য বেলা’কে সাধুবাদ জানাই। নদীর দু’পারে পরিকল্পিত বাঁধ দেয়া হলে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আশা করি প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে। প্রশাসনকে চাপসৃষ্টি না করলে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু সমাধান মিলবে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরিবেশ রক্ষার এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে’’। অনুষ্ঠানে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ জন। এর মধ্যে ১২ জন নারী ও ৫৬ জন পুরুষ।