কমিউনিটি কনসালটেশন মিটিং
প্রেক্ষিত ভারানী খাল
তারিখ: ২১ নভেম্বর ২০১৯
স্থান: প্রেসক্লাব মিলনায়তন, বরগুনা সদর, বরগুনা।
উপকূলীয় জেলা বরগুনা। পায়রা, বিষখালী ও হরিনঘাটা নদী দিয়ে ঘেরা। এই জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য শাখা নদী ও খাল। এর মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি খাল হচ্ছে ভারানী খাল। এই অঞ্চলের খালগুলো দিয়ে মানুষ যেমন সর্বত্র যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে তেমনি কৃৃষকদের ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদার উৎস হিসেবে এই জলাশয়গুলো ভূমিকা রেখে চলেছে। দির্ঘদিন হতে স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের অদূরদর্শী কর্মকান্ড এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারনেই মূলত: এ জেলার খালসহ অন্যান্য জলাশয় দখল হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের খালের ভিতর অবৈধ দখল থাকায় একদিকে যেমন জলাশয়গুলো সংকুচিত হচ্ছে এবং একই কারনে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে নাব্যতা সংকটে পড়েছে। তাই উপকূলীয় এসব এলাকার নৌযোগাযোগও সংকটের মুখে পড়েছে। পত্রিকায় এ সংμান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন। বরগুনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পায়রা ও খাকদোন এ দু’টি নদীর সাথে সংযোগ সৃষ্টিকারী ভাড়ানী খালটি বরগুনা বাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিন যাবত এই খালটির দু’পারের ভুক্তভোগী কৃষক এবং বরগুনা পৌরসভার স্থানীয় সচেতন নগরবাসী খালটি পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তারা জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র নিকট খালটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ খালটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আইনগত সহযোগিতার আবেদন জানান।
প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারনে ‘‘বেলা’’ খালের দু’পাড়ের কৃষক, সাধারন জনতা ও সচেতন মহালের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে ভারানী খালের দখল উচ্ছেদে ২০১৮ সালে মামলা দায়ের করে। উচ্চ আদালতের দখল উচ্ছেদের নির্দেশনায় বরগুনা জেলা প্রশাসন ভারানী খালের দু’পারের অবৈধ স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে অভিযান পরিচালনা করেন। খালপাড়ে পূনরায় কোনো স্থাপনা অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে কিনা এবং বতর্ম ান সার্বিক পরিস্থিতি জানতে ২১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে খালের সাথে সম্পর্কিত কমিউনিটির বিভিনড়ব শ্রেণীপেশার মোট ২২ জন (পুরুষ) অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে সকাল ১১:০০ ঘটিকায় বরগুনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘‘কমিউনিটি কনসালটেশন মিটিং প্রেক্ষিত ভারানী খাল’’ শীর্ষক এক সভার আয়োজন করেছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সৈকত সংবাদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক জনাব জাকির হোসেন মিরাজ এর সভাপতিত্বে এ সভা অনুর্ষ্ঠিত হয়। এ সভার শুরুতেই পরিচয় পবর্ শেষে সভার উদ্দেশ্য ও ইস্যু ভিত্তিক আলোচনা করা হয়। বেলা বরিশালের ফিল্ড ম্যানেজার জনাব লিংকন বায়েন ইস্যু ভিত্তিক আলোচনায় ভারানী খালের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে বেলা কতৃর্ক উচ্চ আদালতে মামলা, সংশিষ্ট বিধিবিধান এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন ।
তিনি অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে ভারানী খালের দ’ুপাশে অবৈধ দখলদারদের কারনে নৌ-যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও জেলেসহ সাধারন মানুষের নানা ভোগাšিরÍ মুখে পড়তে হয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সাধারন জনতার দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বেলা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জনস্বার্থে মূলত উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মামলা পরবতীর্ সময়ে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক প্রশাসন দখলদার উচ্ছেদ কার্যμমও পরিচালনা করেছেন। এখন যাতে আর পূর্বের ন্যায় এ খালে দখল কার্যμম চলতে না পারে তা লক্ষ্যরাখা এবং সময় মতো তা বেলাকে অবহিত করার দায়িত্বও আপনাদের। মোটকথা নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলেরই ভূমিকা রাখার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।’’
বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি ও করনীয় বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মোঃ মিজানুর রহমান, স্বপন দাস, ইফতেখার শাহীন, মোঃ রাসেল মিয়া, মোঃ আসাদুজ্জামান, মোঃ ইয়াসিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ‘‘এতদিন খালটি সচল না থাকায় নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের সেচ কার্যμমও ব্যাহত হচ্ছিল। জেলেদের এক নদী হতে অন্য নদীর সহজ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সুতরাং এ খালের গুরুত্ব এক কথায় বলে বুঝানো কঠিন। সরকারের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে কুচμী মহল নানা ফন্দিফিকির করে খালটি দখল করেছিল। যে কারনে খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে এখন নাব্যতা সংকটে পড়েছে। অনেক দিন পর হলেও বেলা’র মামলার প্রেক্ষিতে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে
আমরা সন্তুষ্ট। তবে খালটির নাব্যতা সংকট রয়েই গেছে। তাই বেলা’র মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়া হল, খালটির সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারন। পরিকল্পিত ভাবে খনন ও শাখা খালগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি খাল পাড়ে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হলে একদিকে যেমন দখলদারিত্ব কমে যাবে আবার শহরের সৌন্দর্যও বেড়ে যাবে বহুগুন’’।
দাবী ও প্রত্যাশা সমূহ-
১। খালটির সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারন।
২। পরিকল্পিত ভাবে খনন করা ও শাখা খালগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা।
৩। খালপাড়ে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা
৪। খালপাড়ে লিজ প্রদান বন্ধ করা
৫। লিজ গ্রহীতাকে কোনমতে পাকা স্থাপনা না করতে দেয়া
৬। স্থানীয় প্রশাসনের খাস খতিয়ানের জমির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা
৭। বরগুনা এলাকার খাকদন নদী ও অন্যান্য দখলকৃত খালগুলো উদ্ধারে বেলার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, ভাড়ানী খালটি বরগুনা জেলা শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নদী পায়রা ও খাকদোনের সাথে সংযোগ সৃষ্টি করার কারনে খালের পার্শ্ববতীর্ এবং দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের কাছে এ খালটির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে বরগুনা জেলা শহরের সাথে পার্শ্ববর্তী তালতলী উপজেলা সহ আরো অন্যান্য উপজেলাগুলোর ব্যবসা-বানিজ্য, অনেক গ্রামের চাষাবাদ ও হাজার হাজার মানুষের মালামাল আনা-নেওয়া, সহজ যাতায়াতে খালটির বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কয়েক বছর আগেও যখন খালটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বজায় ছিল তখন এ খাল দিয়ে ছোট ছোট লঞ্চ, মালবোঝাই কার্গো, ট্রলার সহ অন্যান্য বাহারী নৌকা চলাচল করতো। বেলা’কে ধন্যবাদ জানাই তাদের জনস্বার্থে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য। দেরীতে হলেও খালটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জবাবদিহীতার মুখে পড়ে প্রশাসন এখন কিছুটা হলেও জনস্বার্থ রক্ষায় আন্তরিক হচ্ছে। এটা ইতিবাচক দিক। তাই বেলাকে আগামীতেও বিষয়টি জরদারিতে রাখার অনুরোধ জানাই’’। পরিশেষে তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন।