আজ ২৬ এপ্রিল, ২০২২ মহামান্য হাইকোর্ট কক্সবাজার জেলাস্থ চকরিয়া উপজেলাধীন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বগাচতর, রিংভং, ডুলহাজারা, উচিতার বিল, ফাসিয়াখালী মৌজাসমূহে ৬টি (ডুলহাজারা ২, ডুলহাজারা ৩, ডুলহাজারা ৪, পাগলীর বিল, ফাসিয়াখালী ছড়া ১, ও ফাসিয়াখালী ছড়া-২) বালুমহালকে বিধিবহির্ভূতভাবে তালিকাভূক্তকরণ ও জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার কর্তৃক উক্ত বালুমহালগুলো নতুন করে ইজারার উদ্দেশ্যে জারিকৃত বিগত ১০ মার্চ, ২০২২ তারিখের টেন্ডার পরিপত্র সংবিধান, বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ও বিধিমালা বহিভর্’ত হওয়ায় কেন অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সেই সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সংঘটিত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও দোষীদের নিকট থেকে তা আদায় এবং বালু মহালগুলো ও প¦ার্শবর্তী জলাধার, টিলা, কৃষিজমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় বিবাদীদের প্রতি কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে মহামান্য আদালত বালুমহালগুলোর ঘোষিত তালিকা এবং ১০ মার্চ, ২০২২ তারিখের টেন্ডার পরিপত্রের কার্যকারিতা ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং উল্লেখিত ৬টি বালুমহাল; বগাচতর, রিংভং, ডুলহাজারা, উচিতার বিল, ফাসিয়াখালী মৌজাসমূহে অবস্থিত ডাঙার বিল, রিংভং খাল, বগাছড়ি খাল, পাগলীর বিল ও উচিতার বিল নামক জলাধার; সংরক্ষিত বনভূমি, টিলা, কৃষিজমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। সেইসাথে বালু উত্তোলনের ফলে উল্লেখিত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্তার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরুপণসাপেক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
জনাব বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও জনাব বিচারপতি এস. এম. মনিরুজ্জামান-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ৪২৭২/২০২২) প্রাথমিক শুনানী অন্তে উল্লেখিত রুল ও আদেশ জারি করেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলাস্থ চকরিয়া উপজেলাধীন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রংমহল গ্রামের সন্নিকটে বগাচতর, রিংভং, ডুলহাজারা, উচিতার বিল, ফাসিয়াখালী মৌজাসমূহে রয়েছে ডাঙার বিল, রিংভং খাল, বগাছড়ি খাল, পাগলীর বিল ও উচিতার বিল নামক জলাধার এবং সংরক্ষিত বনভূমি। আরও রয়েছে টিলা শ্রেণীর পাহাড়ও। ডাঙার বিলের একপাশে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। উল্লেখিত জলাধারসমূহে রয়েছে ৬টি ঘোষিত ও ইজারকৃত বালুমহাল যেখানে রয়েছে সংরক্ষিত বনভূমি। ইজারাকৃত এ বালুমহালের ব্যতিত জলাধার, কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা ও সমতল ভূমির মাটি এস্কেভেটর দিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে এবং শক্তিশালী ড্রেজারের মাধ্যমে ৫০-৬০ ফুট গভীর থেকে বালু তোলা হচ্ছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ মাটি ও বালু পরিবহনের লক্ষ্যে ভরাটও করা হয়েছে প্রায় ৪০০০ ঘনফুট আয়তনের একটি খাল। রংমহল গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বগাইছড়ি নামক ছড়ার বউঘাটা পয়েন্টে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পানির প্রবাহ এবং ছড়ার ওপর তৈরি করা মাটির বাঁধ কাম সড়কের ওপর দিয়ে ট্রাকযোগে পরিবহন হচ্ছে ট্রাক মাটি ও বালু। ফলশ্রæতিতে উল্লেখিত এলাকায় মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ।
প্রতিদিন ট্রাকযোগে মাটি ও বালু পরিবহনের ফলে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ডুলাহাজারা-বগাইছড়ি সড়কে। ধুলো মিশ্রিত বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ রংমহল গ্রামবাসীগণ। বর্ষায় ভূমিধসের আশঙ্কায় রয়েছে এই এলাকার অধিবাসীরা। সেইসাথে সীমানা প্রাচীর ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সংরক্ষিত বনভূমি।
সংরক্ষিত বনভূমি সংকটে থাকায় বন বিভাগ উল্লেখিত ছয়টি বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য সুপারিশ করা সত্তে¡ পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় না এনে বিগত ১০ মার্চ, ২০২২ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে চকোরিয়া উপজেলার উল্লেখিত বিলুপ্ত ঘোষণার সুপারিশকৃত ৬টি বালুমহাল ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে যা দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আশরাফ আলী এবং রাষ্টপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব শ্রী সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; ২। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৩। চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন; ৪। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ৫। প্রধান বন সংরক্ষক; ৬। জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার; ৭। পুলিশ সুপার, কক্সবাজার; ৮। পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চল; ৯। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, চট্রগ্রাম, ১০। উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা; ১১। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চকরিয়া উপজেলা, কক্সবাজার; ১২। রেঞ্জ কর্মকর্তা, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ; ১৩। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চকরিয়া পুলিশ স্টেশন; ১৪। চেয়্যারম্যান, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ, চকরিয়া, কক্সবাজার।
অপর একটি মামলায় (নং৩৩৭২/২০২২) একই আদালত প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে যশোর জেলাধীন কেশবপুর উপজেলার অন্তর্গত বারুইহাটি মৌজায় কৃষি (ডাঙা) শ্রেণির জমিতে বিধিবহির্ভূতভাবে “মেসার্স রোমান ব্রিকস” নামক একটি ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা কেন বেআইনী ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসাথে ইটভাটাটির অবৈধ ও দূষণ কার্যক্রম বন্ধে বিবাদীগণের ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ও জনস্বার্থ বিরোধী ঘোষণা করা হবেনা এবং ইটভাটাটি বন্ধ করতে ও বর্তমান স্থান থেকে অপসারণে বিবাদীগণকে (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। একইসাথে ইটভাটাটি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে সম্পর্কে প্রতিবেদন ১ মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্টপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব শ্রী সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
এস. হাসানুল বান্না
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২২