আজ (৩০ এপ্রিল, ২০২৪) ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত ৩টি খাল (তেতুঁলঝড়া, যোগী-জাঙ্গাল (জুগী জঙ্গল) ও নয়নজুলী) ও ২টি {(তাঁতি বিল (শুকনা বিল) ও রইপতা (নোয়াদ্দা))} বিলের মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে আদালত উল্লেখিত খাল ও বিল পুণরুদ্ধারের জন্য দখল ও দূষণকারীর তালিকা প্রস্তুত করত: দখল ও দূষণকারীর বিরুদ্ধে গৃহিতব্য পদক্ষেপ সম্বল্বিত সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে উল্লেখিত বিবাদীগণকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে উল্লেখিত নির্দেশ প্রতিপালন বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত।
অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত উল্লেখিত খাল ও বিল রক্ষা ও পূনরুদ্ধারে বিবাদীগণের ব্যর্থতা কেন আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। জারিকৃত এ রুলে মহামান্য আদালত দূষণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এবং সকল দখলদার ও ক্ষতিকর স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক উল্লেখিত খাল ও বিলগুলো রক্ষা, পূনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ৪৫১১/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদীগুলোর সাথে সংযুক্ত রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও জলাশয় যারমধ্যে জামুরমুচিপাড়া মৌজায় তেতুঁলঝড়া খাল; কান্দিবলিয়ারপুর, কোÐা এবং চান্দুলিয়া মৌজায় বামনী খাল; পাথালিয়া মৌজায় যোগী-জাঙ্গাল (জুগী জঙ্গল); নয়নজুলী খাল; চারিগাঁও ও চাকরগাঁও মৌজায় তাঁতি বিল (শুকনা বিল) ও বড়ওয়ালিয়া ও মোহনপুর মৌজায় রইপতা (নোয়াদ্দা) উল্লেখযোগ্য। এ খাল ও বিলগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক গ্রামবাসীর জীবন ও জীবিকা। একসময় কৃষি নির্ভর সাভারবাসী সেচের জন্য অনেকাংশেই এসকল খাল ও বিলের পানির উপর নির্ভরশীল ছিল। সেইসাথে এলাকার মৎস্যজীবী স¤প্রদায় এসকল খাল ও বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি নিজেদের আমিষের চাহিদাও পূরণ করে আসছিল। খাল ও বিলগুলো দেশিয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ছিল। অবৈধ দখলদারিত্ব ও দূষণে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব খাল, বিল ও জলাশয়গুলো বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব খাল ও বিলের অংশবিশেষ ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি শিল্প মালিকগণ তাদের শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখিত খাল ও বিলসমূহকে। বর্জ্য মিশ্রিত এ দূষিত পানি একদিকে যেমন ফসলে পচন ধরাচ্ছে অন্যদিকে বিলুপ্ত করছে দেশিয় প্রজাতির মাছ এবং স্থানীয় মানুষদের ফেলেছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। খালের উপর নির্ভরশীল কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়ের এক বৃহৎ অংশ ইতোমধ্যে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য শিল্পকারখানা সাভারে স্থানান্তরিত হওয়ায় ও নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় এ উপজেলার খাল, বিল ও জলাশয়সমূহ অস্তিত্ব হারাচ্ছে এবং এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উল্লেখিত খাল ও বিলসমূহকে চলমান দখল ও দূষণমুক্ত করে সংরক্ষণে বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলার উপ পরিচালক, সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি)।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।