– প্রেস বিজ্ঞপ্তি –
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদগণের ব্যর্থতা কেন বেআইনী, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে আদালতের রুল
আজ ১৫ ফেব্রæয়ারি, ২০২২ মহামান্য হাইকোর্ট বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়ায় কেন বেআইনী, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। একইসাথে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুর মান উন্নয়নের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবেনা তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে বায়ূ দূষণের প্রধান উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও তা হ্রাসের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম প্রয়োগ এবং পোড়ানো ইটের বিকল্প কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নের প্রতিবেদন আদেশ প্রাপ্তির ৪ মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
জনাব বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও জনাব বিচারপতি এস. এম. মনিরুজ্জামান-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলার (নং- ২০১৪/২০২২) প্রাথমিক শুনানী অন্তে উল্লেখিত রুল ও আদেশ জারি করেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শুরু থেকেই বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা প্রায়ই উঠে আসছিল বিশ্বের শীর্ষে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে অনুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস এবং ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুর মান বা একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং তা স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’ যা সবার জন্য ক্ষতিকর। ডিসেম্বর, ২০২১ এবং জানুয়ারি ২০২২-এ ২-২৩ ঘণ্টা বায়ুর মান ৩০০ থেকে ৪৪৯-এ ছিল। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল আট দিন। জানুয়ারি, ২০২২-এ ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। এমন পরিস্থিতিতেও কোন রকম স্বাস্থ্য সতর্কতা ছাড়াই নগরবাসী স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দূষিত বায়ুই সেবন করছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যারয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)-এর তথ্যমতে, বিগত ৬ বছরে সর্বমোট ৩৮ দিন বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া গেছে যার অর্থ বছরে ৭ দিনেরও কম বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করতে পারছে এ নগরবাসী। বায়ু দূষণ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে থাকলেও এদেশে কখনও জারি হয়নি কোনেরূপ স্বাস্থ্য সতর্কতা ফল¤্রুতিতে প্রতিবছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় ১.৫৩ লক্ষের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্টপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব শ্রী সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ; ২। সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; ৩। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৪। সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়; ৫। সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ৬। সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; ৭। সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; ৮। সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়; ৯। মেয়র ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ); ১০। মেয়র, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর); ১১। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ১২। চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; ১৩। প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক পরিবহন ও জনপথ অধিদপ্তর; ১৪। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ; ১৫। পরিচালক, মনিটরিং এÐ এনফোর্সমেন্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর।
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
এস. হাসানুল বান্না
আইনজীবী, বেলা।
মোবাইল: ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ১৫ ফেব্রæয়ারি, ২০২২