আজ (০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বায়ূ দূষণের প্রধান উৎসসমূহ ও কার্যক্রম চিহ্নিত করতে ও বায়ু দূষণ হ্রাস করতে বিবাদীগণকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে আদালত বিবাদীগণকে বায়ুর মানমাত্রা অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছালে তা থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় আত্ম-সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণের দিকনির্দেশনা দিয়ে এলার্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে জরুরি সতর্কীকরণ বার্তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসাথে উল্লেখিত নির্দেশসমূহ প্রতিপালন বিষয়ক প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন মহামান্য আদালত ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) কর্তৃক ২০২২ সালে দায়েরকৃত এক জনস্বার্থমূলক মামলায় (নং ২০১৪/২০২২) প্রদত্ত বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখের আদেশের বাস্তবায়ন চেয়ে দায়েরকৃত আবেদনের ভিত্তিতে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
ঢাকা মহানগরীর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেলা এক জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ২০১৪/২০২২) দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী অন্তে মহামান্য আদালত বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ এ বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদগণের ব্যর্থতা কেন বেআইনী, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। একইসাথে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুর মান উন্নয়নের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবেনা তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। সেইসাথে বায়ূ দূষণের প্রধান উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও তা হ্রাসের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম চালুর নির্দেশ প্রদান করেন।
বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যা-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) অনুযায়ী, ডিসেম্বর, ২০২৩ এর শেষ ১ সপ্তাহ এবং জানুয়ারি, ২০২৪ এর অধিকাংশ দিনে রাজধানী ঢাকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও তা থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় আদালতের নির্দেশ ও বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১৩(৫) অনুযায়ী কোনো রকম সতর্কীকরণ বার্তা প্রদান করা হয়নি।
উল্লেখ্য, বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১৩(৫) অনুযায়ী অছও এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় অত্যন্ত ক্ষতিকর পর্যায়ে উপনীত হলে পরিবেশ অধিদপ্তর উপযুক্ত মাধ্যমে জনগণকে সতর্কীকরণ বার্তা প্রদান করবে এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করবে। একই বিধিমালার বিধি ১৫ অনুযায়ী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি গঠনও করা হয়েছে। এ কমিটির অন্যতম কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে কোনো শহর, অঞ্চল বা নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে উপনীত হলে উক্ত শহর, অঞ্চল বা স্থানে জনসাধারণের চলাচলের উপর সতর্কতা আরোপের বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা ও বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী যে কোনো উৎসের চলাচল ও কার্যক্রমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশনা প্রদান করা।
বেলার পক্ষে মামলার আবেদন শুনানী করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।
মামলার বিবাদীগণ- ১। সচিব, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ; ২। সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; ৩। সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; ৪। সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়; ৫। সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ৬। সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; ৭। সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; ৮। সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়; ৯। মেয়র ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ); ১০। মেয়র, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর); ১১। মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ১২। চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; ১৩। প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক পরিবহন ও জনপথ অধিদপ্তর; ১৪। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ; ১৫। পরিচালক, মনিটরিং এ- এনফোর্সমেন্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল- ০১৮৩৩০২৬২৬২